Wednesday, March 21, 2012

বিশ্বকাপ ফাইনাল আর শততম টেস্টের সেই দুটি সেঞ্চুরি


 স্মরণীয় ম্যাচবিশ্বকাপ ফাইনাল আর শততম টেস্টের সেই দুটি সেঞ্চুরি
১৯ বছর বয়সে যখন শুরু করেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, তখন রিকি পন্টিং এক টগবগে তরুণ। চরিত্রে পুরোদস্তুর অস্ট্রেলিয়ান- মাঠে দারুণ পেশাদার কিন্তু মাঠের বাইরে এক বাঁধনহারা জীবন। নাইট ক্লাবে সময় কাটানো, ঘোড়দৌড়ের মাঠে বাজি ধরার মতো অক্রিকেটীয় বিষয়-আশয় নিয়ে এত ব্যস্ত যে তখন কেউ ভাবেইনি একদিন কত দূরে যাবে ছেলেটি। টেস্ট ক্রিকেটে ১৭ বছর কাটানোর পর দেখা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর সঙ্গে তুলনীয় ক্রিকেটার আছেন একজনই_স্যার ডন ব্র্যাডম্যান।
অস্ট্রেলিয়ানরা যাঁকে বাইরে রেখে সব হিসাব শুরু করে, পন্টিং অন্তত পরিসংখ্যানে সেই ব্র্যাডম্যানকেও ছাড়িয়ে গেছেন অনেক ক্ষেত্রেই। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান তাঁর, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিও। সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের রেকর্ডে তো সারা বিশ্বেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই। ব্র্যাডম্যান যেখানে ছিলেন না সেই ওয়ানডেতেও বা কম কী! টানা তিনটি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি, এর দুটিতে আবার ছিলেন অধিনায়ক। দেড় দশকেরও বেশি দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে আরো কত অর্জন যে আছে! অভাব নেই মনে রাখার মতো ইনিংসেরও। তবে পন্টিং নিজে বেছে নিয়েছেন দুটিকে_২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল আর ২০০৬ সালের সিডনি টেস্ট।
মনে রাখার মতোই স্মৃতি বটে! ২০০৩ বিশ্বকাপের আগে যখন অধিনায়কের দায়িত্ব পান 'পান্টার'_অনেকেরই সেটা ভালো লাগেনি। স্টিভ ওয়াহর ডেপুটি হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন শেন ওয়ার্ন। ইমেজ সংকটের কারণে তাঁকে যদি বাদ দিতে হয়, তাহলেও বা পন্টিং কেন? তাঁরও তো ইমেজ এমন কিছু ভালো নয়! সমালোচকদের জবাব দেওয়ার জন্য যেন বিশ্বকাপের ফাইনালটাকেই বেছে নিয়েছিলেন পন্টিং। সে ম্যাচে তাঁর শুরুটা হয়েছিল অবশ্য হার দিয়ে, টস জিতেছিলেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। তবে সৌরভের আমন্ত্রণে ব্যাট করতে নেমে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট আর ম্যাথু হেইডেন দারুণ একটা সূচনাই এনে দিয়েছিলেন স্বাগতিকদের। মাত্র ১৪ ওভারে স্কোর বোর্ডে ১০৫ রান উঠে যাওয়ার পর পন্টিং যখন মাঠে নামলেন, তখন তিনি একদম নির্ভার। শুরুটা যেভাবে করেছিলেন, তাতেও ছিল না কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস। বরং যেন উল্টোটাই ঘটছিল, তৃতীয় উইকেটে তাঁর সঙ্গে জুটি গড়া ডেমিয়েন মার্টিন মাত্র ৪৬ বলে ৫০ ছুঁয়ে ফেললেও পঞ্চাশে পেঁৗছাতে পন্টিংয়ের লেগেছে ৭৪ বল। ঝড়টা শুরু হয়েছে এর পর_হরভজন সিংকে সুইপ করে মারা দুটি ছক্কা দিয়ে। তার চেয়েও অবিশ্বাস্য ছিল পেসার আশীষ নেহরাকে এক হাতে সুইপ করে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা। এ ঝড়ে পরের ৫০ রান তিনি করেছেন মাত্র ২৯ বলে! আর ইনিংসশেষে যখন বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁর নামের পাশে লেখা ১২১ বলে ১৪০, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ২ উইকেটে ৩৫৯। এরপর অস্ট্রেলিয়ার জয়টা ছিল কেবলই সময়ের ব্যাপার!
২০০৬ সালের সিডনি টেস্টটা ছিল তাঁর শততম টেস্ট। তাতে প্রথম ইনিংসে ১২০ রানের ইনিংস খেলেই ইতিহাসের অংশীদার হয়ে গিয়েছিলেন পন্টিং, শততম টেস্টে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডে নাম লিখিয়ে। কিন্তু তখনো আরো অনেক কিছুই বাকি ছিল! ওই ম্যাচের শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৭৬ ওভারে ২৮৭ রান তুলে ম্যাচ জেতার একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন গ্রায়েম স্মিথ। তিনি কি আর জানতেন, এমন রুদ্ররূপে দেখবেন পন্টিংকে! মাত্র ১৫৯ বলে তাঁর ১৪৩ রানের ইনিংসটা যেন উপহাসই করেছে বেচারা স্মিথের খেলোয়াড়সুলভ ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্তকে, ১৫ ওভার হাতে রেখেই যে ম্যাচ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। নিজের শততম টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে এমন এক কীর্তি গড়েছেন পন্টিং, যার তুলনা মেলা আসলেই ভার!

No comments:

Post a Comment

COUNTER W