Friday, February 24, 2012

শুরু হচ্ছে পন্টিংবিহীন অস্ট্রেলিয়া যুগ




২০০৩ সালের জানুয়ারি। রিকি পন্টিং বিশ্রাম পাওয়ায় ওয়ানডে অভিষেক মাইকেল ক্লার্কের। ৪৭ বলে অপরাজিত ৩৯ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন ২২ বছর বয়সী ক্লার্ক। এরপর আরো ৩৭ ওয়ানডেতে পন্টিংয়ের সঙ্গে খেলা হয়নি ক্লার্কের। খেলা হচ্ছে না আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোবার্টের ম্যাচটিও। তবে এই ম্যাচটা আলাদা। কেবল ক্লার্কই নন, পুরো অস্ট্রেলিয়ান দলেরই পন্টিংবিহীন অধ্যায় শুরু হচ্ছে আজ থেকে। সর্বকালের সেরা ওয়ানডে অধিনায়কের ৫০ ওভারের ম্যাচের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে এরই মধ্যে। আর পন্টিং-পরবর্তী যুগে অস্ট্রেলিয়ার কাণ্ডারি এখন ক্লার্কই।
সেই যাত্রার শুরুতে সহ-অধিনায়ক শেন ওয়াটসনকে পাচ্ছেন ক্লার্ক। চোটের কারণে ভারতের বিপক্ষে ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজসহ ত্রিদেশীয় সিরিজে এত দিন অনুপস্থিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। তাঁকে ফিরে পাওয়াটা নিশ্চিতভাবেই বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে অস্ট্রেলিয়াকে। তাঁকে সেরা একাদশে জায়গা দিতে বেঞ্চে বসতে হতে পারে ডেনিয়েল ক্রিস্টিয়ানকে। ওয়াটসনের মতো চোট সারিয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক ক্লার্ক আর রায়ান হ্যারিসও।
শ্রীলঙ্কান দলে অবশ্য কোনো পরিবর্তন নেই। ব্রিসবেনে ভারতের বিপক্ষে ৫১ রানে জয় পাওয়া দলটা নিয়েই নামবে তারা। ১৯৯৯ সালে হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র মুখোমুখি হওয়া ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কাই জিতেছিল ৩ উইকেটে। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে আজ মাঠে নামবেন জয়াবর্ধনেরা।
২০০৭ সালে হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা টেস্টে ১৯২ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস ছিল কুমার সাঙ্গাকারার। রানে ফিরতে সাবেক এই অধিনায়কের প্রেরণা হতে পারে এটাও। এবারের ত্রিদেশীয় সিরিজে সাঙ্গাকারার পাঁচটি ইনিংস ২৬, ২২, ৩১, ৩০ ও ৮। অর্থাৎ ভালো শুরু করেও টেনে নিয়ে যেতে পারেননি ইনিংসটা। সেই ব্যর্থতাটা আজ পেছনে ফেলতে চাইবেন তিনি।
ত্রিদেশীয় সিরিজে ৫ ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ১৪, শ্রীলঙ্কার ১১ আর ৬ ম্যাচ খেলা ভারতের ১০। আজকের ম্যাচটি যে জিতবে সে ফাইনালে মোটামুটি এক পা দিয়ে ফেলবে। ওয়েবসাইট

পন্টিংকে বাদ দেওয়ায় হাত ছিল ক্লার্কেরও







অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ইতিহাসের সফলতম ক্রিকেটার তিনি। সেই রিকি পন্টিংকে বাদ দেওয়া হয়েছে ওয়ানডে দল থেকে, যদিও তাঁর ইচ্ছা ছিল আরো কিছুদিন খেলে যাওয়ার। এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাঁরা, সেই নির্বাচকমণ্ডলীর পাঁচ সদস্যের একজন অধিনায়ক হিসেবে পন্টিংয়ের উত্তরসূরি মাইকেল ক্লার্ক। দায়টা কাঁধে নিতে তিনি কিন্তু মোটেই পিছপা হচ্ছেন না, প্রকাশ্যেই জানাচ্ছেন নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা ছিল তাঁরও। তবে একই সঙ্গে তাঁর বিশ্বাস, এটা ব্যক্তি পন্টিংয়ের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বে কোনো প্রভাব ফেলবে না!
'আমি নির্বাচকদের প্যানেলের সদস্য, এটা একশ ভাগ সত্যি। এটা তো এখন অধিনায়কের দায়িত্বেরই অংশ। আর এ সিদ্ধান্তটা আমরা নিয়েছি একটা প্যানেল হিসেবে। রিকি পন্টিংয়ের মতো একজন গ্রেটকে ছাড়া খেলতে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন, কিন্তু সিদ্ধান্তটা আমরা সবাই মিলে নিয়েছি। অবশ্যই আমাদের আলোচনার অনেকখানি জুড়ে ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপ এবং আমি এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি জড়িত ছিলাম'- বলেছেন ক্লার্ক। তবে সে সঙ্গে এটাও বলেছেন, 'সে জানে এটা কোনোভাবেই ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, আমি নিশ্চিত আমাদের বন্ধুত্বটা এর চেয়ে অনেক শক্তিশালী।'
ক্লার্ক অবশ্য এটাও মানছেন, পন্টিংয়ের অভাবটা ঠিকই অনুভূত হবে। এর আগে অন্তত ৩৮টি ওয়ানডেতে পন্টিংকে ছাড়া খেলেছেন তিনি, কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতাটা অন্য রকম হবে, 'অবশ্যই তাকে মিস করব আমরা। অনেক দিন ধরেই পান্টার আমার খুব ভালো বন্ধু, সেটা তো আর বদলাচ্ছে না। অনেক ম্যাচে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। তাই যখন মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখব সে নেই, অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অদ্ভুত হবে। আমি মাঠে তার দিকনির্দেশনা মিস করব, মাঠের বাইরেও। তার বন্ধুত্ব, অভিজ্ঞতা আর এই খেলাটি সম্পর্কে তার জ্ঞান- এ সব কিছুরই অভাব বোধ করব। একজন তরুণ খেলোয়াড়ের মধ্যে যত প্রতিভাই থাকুক, এগুলো এমন বিষয়, বিশেষ করে অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান অর্জন করতেই হয়।' ক্রিকইনফো

ব্যাটসম্যানদের দুষলেন মাশরাফি

‘ব্যাটসম্যানরা কেউ দায়িত্ব নিয়ে খেলেনি। ব্যাটিংয়ে নেমে সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটাই আমরা করেছি। অপ্রয়োজনীয় শট খেলেছি। অনেক বেশি শট খেলেছি।’ চিটাগং কিংসের বেঁধে দেওয়া ১২১ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে ব্যর্থ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা হতাশার সুরে এ কথাগুলোই বললেন।
মাশরাফির ভাষায়, ‘১২১ রান করতে না পারার কোনো অজুহাত নেই।’ বিপিএলে ঢাকার হাতে রয়েছে আরও দুটি ম্যাচ। আজকের ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর সেমিফাইনালে যেতে হলে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসকে পরবর্তী দুটি ম্যাচে জিততেই হবে। কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না যদি আজকে জয় পেত ঢাকা। পুরো ব্যাপারটিই হতাশাগ্রস্ত করেছে গ্ল্যাডিয়েটরস অধিনায়ককে। বলেছেন, ‘আমরা নিজেরাই নিজেদের সমস্যার মধ্যে ঠেলে দিয়েছি।’
আফতাব, নাজিমউদ্দিনের মতো খেলোয়াড়দের না খেলিয়ে মেহরাব জুনিয়রকে খেলানো নিয়ে তির্যক প্রশ্ন ছিল সংবাদ সম্মেলনে। দলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়ে মাশরাফি বললেন, রানা নাভিদ কিছুটা অসুস্থ থাকায় মেহরাবকে নেওয়া হয়েছিল একজন ব্যাকআপ বোলার হিসেবে। তিনি বলেন, ‘অসুস্থতা আমাদের ড্রেসিং রুমের একটি সমস্যা এই মুহূর্তে। ইমরান নাজিরের অনুপস্থিতিতে নাজিমউদ্দিনকে খেলাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরও শরীর খারাপ।’
পরের দুটি ম্যাচকে কঠিন আখ্যা দিলেও মাশরাফি এখনই আশা হারাতে চান না। তিনি বলেছেন, ‘যদিও আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছি। কিন্তু এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। হতাশার কিছু নেই।’

বিপিএলের শেষ অধ্যায় শুরু আজ

চট্টগ্রাম অধ্যায় শেষ। বন্দরনগরীতে ৮ ম্যাচ শেষে আজ ঢাকায় শুরু হচ্ছে বিপিএলের শেষ অধ্যায়। টানা ছয় দিনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হবে প্রথম বিপিএলের শেষ ১১টি ম্যাচ। প্রাথমিক পর্বের আর ৮টি ম্যাচ বাকি। ২৮ ফেব্রুয়ারি একই দিনে দুটি সেমিফাইনাল, পরদিনই ফাইনাল।
এক সিলেট রয়্যালস ছাড়া বাকি ৫টি দলই আছে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে। আট ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত শীর্ষে খুলনা রয়েল বেঙ্গলস। সমান পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটে দুইয়ে দুরন্ত রাজশাহী। তবে ম্যাচ একটি কম খেলেছে রাজশাহী, আজই সুযোগ থাকছে খুলনাকে টপকে শীর্ষে ওঠার। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের দল মুখোমুখি হবে তলানিতে থাকা সিলেট রয়্যালসের।
সমান সাত ম্যাচে ৮ পয়েন্ট পাওয়া দুই দল—ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ও চিটাগং কিংস আজ মুখোমুখি হবে দিনের প্রথম ম্যাচে। পরশুর ম্যাচে মাথায় চোট পাওয়া ঢাকার পাকিস্তানি ওপেনার ইমরান নাজির কালই ফিরেছেন ঢাকায়। স্থানীয় এক হাসপাতালে আরেক দফা পরীক্ষা করিয়েছেন। তবে এবারও গুরুতর কিছু ধরা পড়েনি, আজ তাই মাঠে নামারও সম্ভাবনা আছে তাঁর ভালোভাবেই। পরশু সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচে হেলমেট ছাড়া ব্যাটিং করছিলেন নাজির, পিটার ট্রেগোকে পুল করতে গিয়ে বল লেগেছিল মাথায়। ছোটখোটো কিছু সমস্যা ছিল চিটাগংয়েরও। হালকা জ্বরে ভুগছিলেন তামিম ইকবাল, এনামুল হক, ফরহাদ রেজারা। তবে আজ তাঁদেরও মাঠে নামার কথা।

পন্টিংয়ের মাঠেই নতুন অধ্যায়

পন্টিং: এখন ওয়ানডের দর্শক পন্টিং: এখন ওয়ানডের দর্শক
এমন কিছু পরিবর্তন হয়নি দলে, শুধু একজন নেই। কিন্তু সেই একজন এমনই এক মহীরুহ যে বলতে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে আজ শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়। সিবি সিরিজের ম্যাচে আজ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া, কিন্তু ড্রেসিংরুমে থাকবেন না রিকি পন্টিং। পন্টিংয়ের ঘরের মাঠ হোবার্টেই অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ক্রিকেট পা রাখছে পন্টিং-উত্তর যুগে।
১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্থে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক। ওই ম্যাচ থেকে আজকের আগ পর্যন্ত ৪৫৮টি ওয়ানডে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। এর ৩৭৪টিতেই ছিলেন পন্টিং, নেতৃত্ব দিয়েছেন ২২৯টিতে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছু ম্যাচ বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু সেই বাদ পড়াও চোট কিংবা বিশ্রামের কারণে। পন্টিংয়ের ছায়া ওই ম্যাচগুলোতেও ছিল। সেই ১৭ বছরের ছায়া সরিয়ে অস্ট্রেলিয়া এখন সামনে তাকাচ্ছে, নেতৃত্বে মাইকেল ক্লার্ক।
নানা সময়ে পন্টিংকে ছাড়া ৩৮টি ওয়ানডে খেলেছেন ক্লার্ক। কিন্তু ওয়ানডেতে পন্টিংকে আর পাশে পাবেন না, এই অনুভূতিটা ছুঁয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ককেও, ‘অনুভূতিটা অদ্ভুত...ওকে অবশ্যই মিস করব। মাঠে ও মাঠের বাইরে ওর পরামর্শ, ওর বন্ধুত্ব, ওর অভিজ্ঞতা, ওর ক্রিকেট-জ্ঞান—সবই মিস করব। ক্রিকেট খেলাটাই এমন যে যত প্রতিভাবানই হোন না কেন, অভিজ্ঞতা ও ক্রিকেট-জ্ঞান খুব গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই পান্টার আমার খুব কাছের বন্ধু এবং এটা অবশ্যই একই রকম থাকবে। ওকে ছাড়াও বেশ কিছু ওয়ানডে আমি খেলেছি, কিন্তু সত্যি বলতে মাঠে নেমে চারপাশে তাকিয়ে ওকে দেখব না, এই অনুভূতিটা অদ্ভুত।’
কিছুদিন আগে ব্যাট হাতে পন্টিংয়ের চরম দুঃসময়ে সবচেয়ে বড় সমর্থকদের একজন ছিলেন ক্লার্ক। দুজনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটা তখনই প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এবার পন্টিংকে ওয়ানডে থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়েছেন, ক্লার্ক নিজেই তাঁদের একজন। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক কমিটির অংশ কোচ ও অধিনায়কও। এই সিদ্ধান্তে নিজের ভূমিকাটাও লুকানোর চেষ্টা করেননি অধিনায়ক, ‘আমি অবশ্যই শতভাগ নির্বাচক কমিটির অংশ। এটা তো এখন অধিনায়কের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সিদ্ধান্তটি পুরো প্যানেলই নিয়েছে। পন্টিং আর খেলবে না, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল, কিন্তু এই সিদ্ধান্তই আমরা নিয়েছি। নির্বাচক প্যানেলের আলোচনায় ২০১৫ বিশ্বকাপই প্রাধান্য পেয়েছে।’
ক্লার্কের বিশ্বাস, এই সিদ্ধান্ত প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোনো ফাটল ধরাবে না, ‘রিকি দীর্ঘদিন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। যদিও অধিনায়ক তখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচক ছিল না, কিন্তু একাদশ নির্বাচনে বড় ভূমিকা ঠিকই ছিল। আমার মনে আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পর পান্টারই আমাকে খবরটা দিয়েছিল। ও খুব ভালোভাবেই জানে, এসব ব্যাপার ব্যক্তিগত কিছু নয়। আমি নিশ্চিত, আমাদের বন্ধুত্ব এসব টানাপোড়েনের ঊর্ধ্বে।’ ওয়েবসাইট।

COUNTER W