Friday, March 9, 2012

ঈদুল আযহা ও কুরবানীর তাৎপর্য এবং গুরুত্বপূর্ণ মাসায়িল সমূহ । ১ম কিস্তি

بسم الله الرحمن الرحيم اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ والصَّلوةُ و السَّلاَمُ عَلى اَشْرَفِ الْاَنْبِياءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَعَلى اَلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِيْنَ
আচ্ছালামু আলাইকুম সম্মানিত ব্লগারগন, আগামী ৭ই নভেম্বর পবিত্র কুরবানী। আসুন আমরা কুরবানীর কিছু মাসায়েল জেনে নেই এবং অপরকে জানিয়ে দেই। ঈদুল আয্হার তাৎপর্য ও কুরবানীর ইতিহাস


# কুরবানীর বিধান আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই বিদ্যমান ছিল


কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানব অথবা ধর্মের ইতিহাস। আল্লাহ পুরস্তির কুরবানী নামক এ মহান নিদর্শন মানব জাতির প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই কার্যকর ছিলো। সকল নবীর উম্মতকেই কুরবানী করতে হয়েছে। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। আল্লাহতায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টি লগ্ন থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে ।

মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোন না কোন ভাবে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে । এটাই মানুষের চিরন্তন স্বভাব বা ফিতরাত।
এ ফিতরাতের স্বীকৃতি প্রদান করে মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছেন ঃ
وَلِـكُلِّ اُمَّةٍ جَعَـلْـنَا مَنْسَكًا لِّـيَـذْكُرُوْا اسْمَ اللهِ عَلى مَـا رَزَقَـهُمْ مِنْ بَـهِيـْمَةِ الْاَنْـعَـامِ “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন”।
{ সূরা আল হজ্জ-৩৪}

মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম কুরবানী


মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম কুরবানী হযরত আদম আ. এর দু’পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। এ ঘটনাটি বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদ সহ বর্ণিত হয়েছে। ইবনে কাসীর একে ওলামায়ে মোতাকাদ্দেমীন ও ওলামায়ে মোতায়াখ্খেরীনের সর্ব সম্মত উক্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন। ঘটনাটি এই :

যখন আদম ও হাওয়া আ. পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ যমজ সন্তান জন্ম গ্রহণ করত। তখন এক শ্রেণীর ভাই বোন ছাড়া হযরত আদমের আর কোন সন্তান ছিলনা। অথচ ভাই বোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না।
তাই মহান আল্লাহ উপস্থিত প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে আদম আ. এর শরীয়তে বিশেষ ভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্ম গ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন গণ্য হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে কন্যা সহোদরা বোন গণ্য হবে না। তাই তাদের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে।
কিন্তু ঘটনাক্রমে কাবিলের সহজাত সহোদরা বোনটি ছিল খুবই সুশ্রী-সুন্দরী তার নাম ছিল ‘আকলিমা’ আর হাবিলের সহজাত বোনটি ছিল তুলনামূলক কম সুন্দরী তার নাম ছিল ‘গাজা’। বিবাহের সময়ে হলে নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত অসুন্দরী কন্যা কাবিলের ভাগে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রু হয়ে গেল। সে জেদ ধরল যে, আমার সহজাত বোনকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে। হযরত আদম আ. তাঁর শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন।

অতঃপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্য নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী গৃহীত হবে, সে-ই উক্ত কন্যার পানি গ্রহণ করবে। হযরত আদম আ. এর নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, যে সত্য পথে আছে, তার কুরবানীই গৃহীত হবে।

তৎকালে কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নি শিখা এসে কুরবানীকে ভস্মীভূত করে আবার অন্তর্হিত হয়ে যেত। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন ঃ
بِـقُـرْبَـانٍ تَـأكُـلُـهُ الـنَّـارُ “ঐ কুরবানী যাকে আগুন গ্রাস করে নিবে”।
{ সূরা আলে ইমরান-১৮৩।}
আর যে কুরবানীকে অগ্নি ভস্মীভূত করত না, সেটাকে প্রত্যাখ্যাত গণ্য করা হত। কুরবানীর এ তরীকা খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ সা. এর যুগ পর্যন্ত সকল পূর্বেকার নবীর যুগে বলবৎ ছিল।
হাবিল ভেড়া, দুম্মা ইত্যাদি পশু পালন করত। সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। কাবিল কৃষি কাজ করত। সে কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্যে পেশ করল। { তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূত্র হযরত ইবনে আব্বাস রা. কর্তৃক বর্ণিত। } অতঃপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নি শিখা অবতরণ করে হাবিলের কুরবানীটি ভস্মীভূত করে দিল এবং কাবিলের কুরবানী যেমন ছিল তেমনি পড়ে রইল। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না। তাই সে হাবিলকে হত্যা করার সংকল্প করল এবং এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করে ফেলল। { মাআ’রেফুল কুরআন বাংলা সংস্করণ-৩২৪ পৃষ্ঠা। }
হাবিল ও কাবিলের কুরবানীর ঘটনা পবিত্র কুরআনে এ ভাবে বর্ণিত হয়েছে,

وَاتْلُ عَلَيْـهِمْ نَبَاَ ابْـنَـىْ ادَمَ بِـالْـحَـقِّ- اِذْ قَـرَّبَـا قُـرْبَانًا فَـتُـقُـبِّـلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُـتَـقَبَّلْ مِنَ الْاخَرِ- قَالَ لَاَقْتُلَـنَّكَ- قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ- لَئِنْ بَسَطْتَّ اِلَىَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِىْ مَا اَنَا بِبَاسِطٍ يَّدِىَ اِلَيْكَ لِاَ قْتُلَكَ- اِنِّىْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعلَمِيْنَ- اِنِّىْ اُرِيْدُ اَنْ تَبُـوْاَ بِـاِثْمِىْ وَاِثْمِكَ فَتَكُـوْنَ مِن اَصْحبِ النَـارِ- وَذلِكَ جَزؤُ الظّلِمِيْنَ- فَطَوَّعَتْ لَـهُ نَـفْسُه قَـتْلَ اَخِـيْـهِ فَقَـتَـلَهُ فَاَصْبَحَ مِنَ الْـخسِرِيْنَ- فَبَـعَـثَ اللهُ غُـرَابًا يَبْحَثُ فِى الْاَرْضِ لِيُرِيَهُ كَـيْـفَ يُـوَارِىْ سَـوْءَةَ اَخِيْهِ- قَالَ يـوَ يْلَتـى اَعَجَزْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِـثْلَ هـذَا الْغُرَابِ فَاُوَارِىَ سَـوْءَةً– فَاَصْبَحَ مِنَ النّدِمِيْنَ “আপনি তাদেরকে আদমের দু’ পুত্রের ঘটনাটি ঠিকভাবে শুনিয়ে দিন। (তা হচ্ছে এই যে,) যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করলো, তখন তাদের একজনের কুরবানী গৃহীত হল আর অপর জনের কুরবানী গৃহীত হলোনা। তখন সে ভাইকে বলল- অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। সে উত্তরে বলল আল্লাহ তো মুত্তাকীদের কুরবানীই কবুল করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। নিশ্চয়ই আমি বিশ্ব জগতের পালন কর্তা আল্লাহকে ভয় করি। আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও। অত:পর তুমি দোযখীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি। অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃ হত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতি গ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ এক কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সে কিভাবে সমাহিত করবে। সে বললো, আফসোস! আমি কি এ কাকের সমতুল্যও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সমাহিত করি! অত:পর সে অনুতাপ করতে লাগল”।
{ সূরা আল মায়িদাহ, ২৭-৩১ আয়াত। }
উল্লেখ্য যে, হযরত আদম আ. এর পর সকল উম্মতের মধ্যেই অবিচ্ছন্ন ভাবে কুরবানীর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।

আমাদের কুরবানী সুন্নাতে ইবরাহীমী


কুরবানী ইবাদত হিসেবে যদিও আদম আ. এর যুগ হতে হয়ে আসছে কিন্তু পরবর্তীতে হযরত ইবরাহীম আ. এর এক ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে শুরু হয়েছে। আমরা হযরত ইবরাহীম আ. এর মিল্লাতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। এ মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা ও মুসলিম জাতির পিতা হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম আ.। তিনি যেমন আল্লাহর নির্দেশে জীবনের সবচাইতে প্রিয় বস্তু- পুত্র ইসমাঈলকে তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে প্রস্তুত ছিলেন, ঈদুল আয্হার দিন মুসলমানরাও তেমনি পশু কুরবানীর মাধ্যমে নিজেদের প্রিয়তম জান-মাল আল্লাহর পথে কুরবানী করার সাক্ষ্য প্রদান করেন।

মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সেই মহত্ব ও মাকবুল কুরবানীকে শাশ্বত রূপদানের জন্যেই আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সা. এই দিনে মুসলমানদেরকে ঈদুল আয্হা উপহার দিয়েছেন এবং এ কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত ইবরাহীম আ. কর্তৃক স্বীয় পুত্র ইসমাঈলের কুরবানীর জীবন্ত ইতিহাস


মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে সান্নিধ্যপ্রাপ্ত মহান নবী হযরত ইবরাহীম আ. কে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন ধরনের কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষা করেছেন। তিনি প্রত্যেকটি পরীক্ষায় পূর্ণ সফলকাম প্রমাণিত হয়েছেন। পরীক্ষাগুলি হলো-

এক.
তাওহীদের হেফজতের প্রয়োজনে চিরদিনের জন্য প্রিয় জ¤œভূমি ত্যাগ করে হিজরত করলেন। হযরত লূত আ. যিনি ইতিপূর্বে তাঁর উপর ঈমান এনেছিলেন তাকে সাথে নিয়ে নিজ জ¤œভূমি ইরাক থেকে হিজরত করে ফিলিস্তিনের কেনানে অবস্থান নিলেন। ৮৬ বৎসর বয়সে সেখানে বসে আওলাদের জন্য দোয়া করলেন
رَبِّ هَـبْ لِىْ مِـنَ الـصَّالِـحِيْـنَ “হে আল্লাহ আমাকে সৎ পুত্র দান করুন”।
{ সূরা আসসাফ্ফাত-১০০।}

মহান আল্লাহ তায়ালা সুসংবাদ দিয়ে বললেন

فَـبَـشَّـرْنهُ بِـغُـلـمٍ حَـلِـيْـمٍ “ইবরাহীমকে এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। ৯৯ বৎসরের সময় আরেক জন ছেলে হয়েছে তার নাম ইসহাক”।
{ সূরা আসসাফ্ফাত-১০১।}

দুই.
নমরুদ কর্তৃক প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়ে চরম ধৈর্য্যরে ও আল্লাহ প্রেমের পরাকাষ্ঠ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর খলীলের জন্য আগুনকে ফুলবাগীচায় পরিণত করে দিয়েছিলেন।
মহান আল্লাহ্ বলেন
قُلْنَا يا نَارُ كُوْ نِىْ بَرْدًا وَ سَلَا مًا عَلى اِبْرَاهِيْمَ “আমি বললাম, হে আগুন, তুমি ইবরাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও”।
{ সূরা আল আম্বিয়া -৬৯। }
তিন.
অতঃপর যখন তাঁর প্রিয় আদরের পুত্র ইসমাঈল ও প্রিয় স্ত্রী হযরত হাজেরা আ. কে মক্কার বিরাণ মরুভূমিতে ছেড়ে আসার আদেশ হলো। সেটাও ছিল কঠিন পরীক্ষা। কেননা বার্ধক্য ও শেষ বয়সের বহু আকাংখার স্বপ্নসাধ, দিবা রাত্রির প্রার্থণার ফল এবং পরিবারের একমাত্র আশার আলো হযরত ইসমাঈল কে শুধু আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে পানি ও জনমানবহীন মরু প্রান্তরে রেখে এসেছেন। অথচ একবারও পিছনের দিকে ফিরেও তাকাননি। যেন এমন না হয় যে, পিতৃ¯েœহ উথলিয়ে উঠে এবং আল্লাহর আদেশ পালনে কোন প্রকার বিচ্যুতি ঘটে যায়। স্ত্রী ও পুত্রকে সেখানে রেখে এসে তিনি কেবল আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করলেন:
رَبَّناَ اِنِّىْ اَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِىْ بِوَادٍ غَيْرِ ذِىْ زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ- رَبَّنَا لِيُقِيْمُوْا الصَّلوةَ فَا جْعَلْ اَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِىْ اِلَيْهِمْ وَاَرْزُقْهُمْ مِّنَ الثَمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُوْنَ “হে আল্লাহ! আমি নিজের এক বংশধরকে আপনার পবিত্র ঘরের নিকট অনাবাদ জায়গায় বসবাস করালাম। হে আল্লাহ ! যেন তারা নামায কায়েম করে। অত;পর আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদের ফল ফলাদি দ্বারা রুজি দান করুন। আশা করি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে”।
{ সূরা আল ইবরাহীম -৩৭।}

চার.
উপরোল্লিখিত পরক্ষিাগুলির কঠিন মঞ্জিল অতিক্রম করার পর হযরত ইবরাহীম আ. কে স্বপ্নের মাধ্যমে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। যা বিগত পরীক্ষাগুলির চেয়ে ও অধিক কঠিন, হৃদয় বিদারক ও আল্লাহ প্রেমের কঠিন পরীক্ষা। কোন কোন বর্ণনা মতে জানা যায় যে, এই স্বপ্ন তিনি পরপর তিন রাত্রি দেখেন।
স্বপ্নে তিনি একমাত্র প্রিয় পুত্র ইসমাঈল কে কুরবানী করতে আদিষ্ট হন। প্রাণ প্রিয় পুত্রকে কুরবানী করার নির্দেশ তাঁকে এমন সময় দেয়া হয়েছিল, যখন অনেক দোয়া কামনা করে পাওয়া সন্তানকে লালন পালন করার পর পুত্র পিতার সাথে চলাফেরা করতে পারে এবং তাঁকে সাহায্য করার যোগ্য হয়েছে। তাফসীরবিদগণ লিখেছেন: এ সময় হযরত ইসমাঈলের বয়স ছিল তের বছর। কেউ কেউ বলেছেন তিনি তখন বয়প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন। { তাফরীরে মাযহারী।}
তবে তাফসীরে রুহুল বয়ানে আছে ৯ বছরের কথা। এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত সত্য যে, নবী রাসূলগণের স্বপ্নও ওহীর অর্ন্তভূক্ত। তাই এ স্বপ্নের অর্থ ছিল এই যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত ইবরাহীম আ. এর প্রতি একমাত্র পুত্রকে যবেহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ হুকুমটি স্বপ্নের মাধ্যমে দেয়ার কারণ হলো হযরত ইবরাহীম আ. এর আনুগত্যের বিষয়টি পূর্ণমাত্রায় প্রমাণিত করা। হযরত ইবরাহীম আ. মহান প্রতি পালকের নির্দেশ সত্বর পালনের নিমিত্তে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। কিন্তু এ পরীক্ষাটি যেহেতু ইবরাহীম আ. এর ব্যক্তিত্বের সাথে সাথে তার পুত্রও সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাই তিনি তার পুত্র ইসমাঈলকে লক্ষ্য করে বললেন
قَالَ يبُنَىَّ اِنِّىْ اَرى فِى الْمَنَـامِ اَنِّى اَذْ بَـحُـكَ فَـانْـظُـرْ مَـاذَا تَـرى- “হে প্রাণ প্রিয় পুত্র আমার! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি। সুতরাং তুমি চিন্তা ভাবনা করে দেখ এবং এ স্বপ্নের ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? তা বল”।
{ সূরা আস-সাফফাত-১০২ ।}

যেমন বাপ, তেমন বেটা। পুত্রও ছিলেন যেন হযরত ইবরাহীম আ. এর ছাঁচে গড়া, কেননা তিনি ও ভাবী নবী। তাই তৎক্ষণাৎ আত্মসর্ম্পনে মস্তক অবনত করে পুত্র জবাবে বললেন :

قَالَ يـاَبَتِ افْـعَـلْ مَا تُـؤْمَرُ- سَـتَـجِـدُ نِىْ اِنْ شَـاءَ اللهُ مِنَ الـصّـبِـرِيْـنَ- “হে আমার পিতাজী! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন”।
{ সূরা আস সাফ্ফাত-১০২।}

পুত্রের সাথে পরামর্শের হিকমত ছিল এই যে,

প্রথমত:
পুত্রের দৃঢ়তা, হিম্মত এবং আল্লাহর আনুগত্যের জয্বা সৃষ্টি হওয়ার পরীক্ষা স্বরূপ।
দ্বিতীয়ত :
সে আনুগত্য স্বীকার করলে সওয়াব ও প্রতিদানের অধিকারী হবে। কেননা সওয়াবের জন্য নিয়ত ও আগ্রহ জরুরী।

তৃতীয়ত :
যবেহের সময় মানুষ হিসেবে এবং স্বভাবজাত পিতৃ¯েœহের কারণে কোন ভূল ভ্রান্তি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে অনেকটা মুক্ত থাকার প্রবল আশা সৃষ্টি হবে।{ তাফসীরে রুহুল বয়ান।}
পরামর্শ শেষে পিতা ও পুত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে কুরবানীর নির্দেশ পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং এ কাজ সমাধার জন্য তারা মিনা প্রান্তরে গমন করেন।

ইতিহাস ও তাফসীর ভিত্তিক কোন কোন রেওয়ায়াত থেকে জানা যায় যে, শয়তান কুরবানীর মহান একাজে বিভিন্নভাবে বাঁধার সৃষ্টি করে । সে প্রথমে মা হাজেরা ও ইসমাঈল আ. কে উল্টো বুঝিয়ে এ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁরা শয়তানের প্ররোচনায় কোন পাত্তা দিলেন না। মরদুদ শয়তান হযরত হাজেরা আ. ও হযরত ইসমাঈল আ. কে ধোঁকা দেয়া থেকে নিরাশ হয়ে মিনা যাওয়ার পথে ‘জামরায়ে আকাবাহ’, ‘জামারায়ে উসত্বা’ এবং ‘জামরায়ে উলা’ এই তিন জায়গায় তিনবার হযরত ইবরাহীম আ. কে প্ররোচিত করার চেষ্টা করে এবং হযরত ইবরাহীম আ. প্রত্যেকবারই তাকে সাতটি করে কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাড়িয়ে দেন। অদ্যাবধি এ প্রশংসনীয় কাজের স্মৃতি স্বরূপ মিনায় ঐ তিনটি স্থানে কংকর নিক্ষেপ করার বিধান হাজীদের জন্য ওয়াজিব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।


অবশেষে পিতা-পুত্র উভয়ে যখন এই মহান কুরবানীর ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানগাহে পৌঁছলেন এবং ইবরাহীম আ. কুরবানী করার জন্য ইসমাঈল আ. কে শোয়ালেন, তখন পুত্র ইসমাঈল আ. পিতা ইবরাহীম আ. কে বললেন আব্বাজান! আমার হাত পা খুব শক্ত করে বেঁধে নিন যাতে আমি নড়াচড়া করতে না পারি। আর আপনার পরিধেয় বস্ত্রাদি সামলে নিন, যাতে আমার রক্তের ছিটা না পড়ে। অন্যথায় এতে আমার ছওয়াব হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া রক্ত দেখলে আমার মা অধিক ব্যাকুল হবেন। আপনার ছুরিটি ধার দিয়ে নিন এবং আমার গলায় দ্রুত চালাবেন, যাতে আমার প্রাণ সহজে বের হয়ে যায়। কারণ, মৃত্যু বড় কঠিন ব্যাপার। আপনি আমার আম্মাজানের নিকট আমার শেষ বিদায়ের সালাম টুকু অনুগ্রহ পূর্বক পৌঁছে দিবেন। যদি আমার জামা তার নিকট নিয়ে যেতে চান, তবে নিয়ে যাবেন।

একমাত্র আদরের সন্তানের মুখে এমন কথা শুনে পিতার মানসিক অবস্থা কি যে হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু হযরত ইবরাহীম আ. দৃঢ়তায় অটল পাহাড় হয়ে জবাব দিলেন, ওগো আমার প্রাণ প্রিয় বৎস! আল্লাহর নির্দেশ পালন করার জন্য তুমি আমার চমৎকার সহায়ক হয়েছ। অতঃপর তিনি পুত্রকে আদর করে চুম্বন করলেন এবং অশ্রু সজল নয়নে তাকে বেঁধে নিলেন ।
অতঃপর তাঁকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে তার গলায় ছুরি চালালেন। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার যে, বার বার ছুরি চালানো সত্বেও গলা কাটছে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কুদরতে পিতলের একটা টুকরা মাঝখানে অন্তরায় করে দিয়েছিলেন।

তখন পুত্র নিজেই আবদার করে বললেন, আব্বাজী! আমাকে উপুড় করে শুইয়ে নিন। কারণ, আমার মুখমন্ডল দেখে আপনার মধ্যে পিতৃ ¯েœহ উথলে উঠে। ফলে গলা কাটা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ছুরি দেখে আমি ঘাবড়ে যাই। সে মতে হযরত ইবরাহীম আ. তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন এবং পুনরায় সজোরে প্রাণপণে ছুরি চালালেন।


কিন্তু তখন ও গলা কাটতেছেনা। হযরত ইবরাহীম আ. চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। হযরত ইবরাহীম আ. এর এ প্রাণন্তর প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হলেন এবং হযরত ইসমাঈলের বিনা যবেহেই তার কুরবানী কবুল করে নিলেন। এ ব্যাপারে হযরত ইবরাহীম আ. এর উপর ওহী নাযিল হলো।
{ তাফসীরে রুহুল মাআ’নী। সূত্র হযরত কাতাদাহ রা. হতে বর্নিত, তাফসিরে ইবনে কাসীর মসনদে আহমদ থেকে নকল করা হয়েছে। সূত্র হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত।}
فَلَمَّا اَسْلَمَا وَتَلَّه لِلْجَبِيْنِ- وَنَادَيْنهُ اَنْ يَّا اِبْرَاهِيْمَ- قَدْ صَدَّقْتَ الرُّءْيَا- اِنَّا كَذلِكَ نَـجْـزِى الْـمُحْسِنِيْـنَ- اِنَّ هـذَا لَهُـوَ الْـبَلـؤُ الْمُبِيْـنُ- وَقَـدَيْنهُ بِـذِبْحٍ عَـظِـيْمٍ- “অবশেষে যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের কে সোপর্দ করলো এরং ইবরাহীম আ. পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন (যবেহ করার জন্যে), তখন আমরা তাকে সম্বোধন করে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি সপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। আমরা সৎকর্মশীলদের এরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। বস্তুত এ এক সুস্পষ্ট কঠিন পরীক্ষা। আর আমরা বিরাট কুরবানী ফিদিয়া স্বরূপ দিয়ে তাকে (ইসমাঈলকে) উদ্ধার করেছি”।
{ সূরা আস-সাফ্ফাত ১২০-১০৭।}
অতঃপর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিলেন এখন পুত্রকে ছেড়ে দিন এবং আপনার নিকট যে দুম্বাটি দাঁড়ানো রয়েছে, পুত্রের পরিবর্তে সেটাকে যবেহ করুন। তখন ইবরাহীম আ. পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখেন, একটি হৃষ্ট পুষ্ট দুম্বা দাঁড়ানো আছে। আল্লাহর শোকর আদায় করে তিনি সেই দুম্বাটিকে যবেহ করলেন।
এটাই সেই কুরবানী যা আল্লাহর দরবারে এতই প্রিয় ও মাকবুল হয়েছিল যে, আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী সকল উম্মতের মধ্যে তা অবিস্মরণীয় রূপে বিরাজমান রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন।
যদ্দরুণ মিল্লাতে ইবরাহীমে তথা দ্বীন ইসলামে এক মহান ওয়াজিব ইবাদত ও শিয়ার প্রতীক হিসেবে এ কুরবানী আজও পালিত হয়ে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা পালিত হতে থাকবে।

তাই মহান আল্লাহ বলেন

وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْا خِرِيْنَ “আর আমরা ভবিষ্যতের উম্মতের মধ্যে ইবরাহীমের এ সুন্নাত স্মরণীয় করে রাখলাম”।
{ সূরা আস আস সাফ্ফাত ১০৮।}

বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রতি কুরবানীর নির্দেশ

আল কুরআনে নবী করীম সা. কে সালাত আদায় করার মতো কুরবানী করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে ঃ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ “তোমার রবের জন্য নামায পড় এবং কুরবানী করো”। { সূরা আল কাউসার -০২}
মহান আল্লাহ কুরবানী ও জীবন দানের প্রেরণা ও চেতনা সমগ্র জীবনে জাগ্রত রাখার জন্যে নবী সা. কে আরো নির্দেশ দিয়ে বলেছেন قُلْ اِنَّ صَلوتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِىْ لِلّهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ– لَا َشَرِيْكَ لَه وَبِذ لِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ- “বলুন! হে মুহাম্মদ! আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যে। তাঁর কোন শরীক নেই। আমাকে তাঁরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আমি সকলের আগে তাঁর অনুগত ও ফরমাবরদার”। { সূরা আল আনআম-১৬২}

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সা. মদীনায় দশ বৎসর অবস্থান করেন। এ সময় তিনি প্রতি বছর কুরবানী করতেন। { সুনানে আত তিরমিযী}


আল্লাহ তায়লা আমাদের প্রচেষ্টাগুলো কবুল করুন। আমিন। ইনশাআল্লাহ ধারাবাহিক ভাবে চলবে। সকলেই সাথে থাকুন।

ঈদুল আযহা ও কুরবানীর তাৎপর্য এবং কুরবানীর মাসায়েল। ২য় কিস্তি{লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং শিক্ষনীয় বিষয়}


بسم الله الرحمن الرحيم


اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ والصَّلوةُ و السَّلاَمُ عَلى اَشْرَفِ الْاَنْبِياءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَعَلى اَلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِيْنَ





কুরবানীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

প্রকৃত পক্ষে কুরবানীর তিনটি মৌলিক ও মহান উদ্দেশ্য রয়েছে।
এক.
আল্লাহর একত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে সারা দুনিয়ার মুসলমান কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে তাঁরই নামে এবং তাঁরই রাসূল প্রদর্শিত পন্থায় কুরবানী করে। এ সবের মাধ্যমে তারা এ কথারই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ এক, তার কোন শরীক নেই, তিনিই সর্ব শ্রেষ্ঠ সার্বভৌমত্বের মালিক কেবল মাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া অন্য কারো বিধান মানা যেতে পারে না। তাঁর দেয়া শরীয়তই সাফল্যের পথ আর তাঁর সন্তুষ্টি বিধানই মুক্তির চাবিকাঠি।
দুই.
মহান আল্লাহ তায়ালার মালিকানা স্বীকার করা। অর্থাৎ সমস্ত জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা। তিনিই অনুগ্রহ করে আমাদের জীবন ও ধন সম্পদ দান করেছেন। আমাদের জীবন ও সম্পদের প্রকৃত মালিক তিনিই। এ জীবন ও সম্পদ তিনি আমাদের নিকট আমানত রেখেছেন। এগুলোর ব্যয় ও পরিচালনার ব্যাপারে আমি সেচ্ছাচারী হতে পারিনা। প্রকৃত মালিকের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি অনুযায়ী এগুলোর ব্যয় ও পরিচালনা হবে। তাঁরই ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি অনুযায়ী আমার জীবন সম্পদ ব্যয় করার জন্য আমি সদা প্রস্তুত। এ প্রস্তুতির নিদর্শন স্বরূপই তাঁর নামে পশু কুরবানী করছি। পশু যবেহের সাথে সাথে তার গলদেশ থেকে যেভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য তাঁর পথে এমনি করেই আমার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও একনিষ্ঠ ভাবে প্রস্তুত।
তিন.
আল্লাহর নেয়ামাতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার। অর্থাৎ আমার যাবতীয় ধন-সম্পদ আল্লাহরই দেয়া নেয়ামত। এগলো তাঁরই একান্ত অনুগ্রহ। আমার প্রতি তাঁর এ সীমাহীন অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এ সম্পদ আমি তাঁরই নামে কুরবানী করছি। আমি যে তাঁর নিকট সত্যি কৃতজ্ঞ, আমার এ কুরবানী তারই নিদর্শন।


কুরবানীর রূহানিয়াত ও প্রাণ শক্তি


প্রাক ইসলামী যুগে লোক কুরবানী করার পর তার গোশত বাইতুল্লাহর সামনে এনে রেখে দিত। তার রক্ত বাইতুল্লাহর দেয়ালে দেয়ালে মেখে দিত। কিন্তু আল কুরআন ঘোষণা করলো- তোমাদের এ গোশত ও রক্ত কোনটারই প্রয়োজন আল্লাহর নেই। তাঁর কাছে তো কুরবানীর সে আবেগ-অনুভূতি পৌঁছে যা যবেহ করার সময় তোমাদের মনে সঞ্চারিত হয় বা হওয়া উচিত। গোশত ও রক্তের নাম কুরবানী নয়। বরং কুরবানী এ তত্ত্বেরই নাম যে, আমাদের সব কিছুই আল্লাহর জন্যে এবং তাঁর পথেই উৎসর্গ করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, কুরবানকারী শুধু মাত্র পশুর গলায়ই ছুরি চালায় না, বরং তার সকল কু-প্রবৃত্তির উপর ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করে। এ অনুভূতি ব্যতীত যে কুরবানী করা হয়, তা হযরত ইবরাহীম আ. ও হযরত ইসমাঈল আ. এর সুন্নাত নয়। এটা একটা জাতীয় রসম মাত্র। তাতে গোশতের ছড়াছড়ি হয় বটে, কিন্তু সেই তাকওয়া পাওয়া যায় না যা কুরবানীর প্রাণ শক্তি।
মহান আল্লাহ বলেন
لَنْ يَنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَائُهَا وَلـكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوى مِنْكُمْ- “ও সব পশুর রক্ত, মাংস আল্লাহর কাছে কিছুতেই পৌঁছে না। বরং তোমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে”।
{ সূরা আল হজ্জ-৩৭}

যে কুরবানীর পেছনে তাকওয়ার আবেগ-অনুভূতি নেই আল্লাহর দৃষ্টিতে সে কুরবানীর কোনই মূল্য নেই। আল্লাহর কাছে সেই আমলই গ্রহীত হয়, যার প্রেরণা দান করে তাকওয়া ।

এ ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে -
اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ “আল্লাহ শুধু মুত্তাকীদের আমল কবুল করেন”।
{ সূরা আল মায়িদ্হ -২৭}
সুতরাং কারো কারো এ প্রশ্ন করার কোন অবকাশ নেই যে, প্রত্যেক বৎসর জাতি শুধু পশু যবেহ করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করবে এবং তিনদিন গোশত খাবে। এর দ্বারা তো জাতীয় কোন উন্নতির লক্ষণ দেখা যায় না। কারণ, কুরবানী শুধু গোশত ভক্ষণ করার জন্য নয় বরং ইহা শরীয়তের একটি হুকুম, সুন্নাতে ইবরাহীমী কে স্বরণ করে আল্লাহর রাস্তায় জান মাল কুরবানী করার এক শক্তিশালী জযবা পয়দা হয়। তা নাহলে অন্যান্য উম্মতের জন্যে গোশত খাওয়া তো মোটেও জায়িয ছিলনা।


কুরবানী আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ রহমত ও বরকতের বিধান


১.
কুরবানীর সময় পশু কুরবানী করার মাধ্যমে আমাদের পশু সুলভ আচরণ পরিবর্তিত হয়ে সেটা যথার্থ মানব সুলভ আচরণে পরিণত হয়। সুতরাং কুরবানীর বিধানটা মুমিন বান্দার চরিত্র সংশোধনের জন্য আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ রহমত।

২.
ধনী-গরীব, অসহায়, দুস্থ ইত্যাদি নানা রকম মুসলমান এ দুনিয়ায় বসবাস করে থাকে। আর তারা সকলেই গোশত উপভোগ করার আশা করে থাকে। কিন্তু অভাব, অসুবিধা, অবহেলা, ও স্বভাবগত দোষের কারণে তাদের মধ্যে অনেকে গোশত উপভোগ করার সুযোগ পায়না এবং অনেকে সুযোগ করে নেয় না।

কুরবানী আল্লাহ প্রদত্ত এমন একটি অপরিহার্য বিধান যে, এটি পালন করার ফলে বছরে অন্তত একবার সকলেই আল্লাহ পাকের এ বিশেষ নেয়ামতটি উপভোগ করার সুযোগ পায়। এমনকি কুরবানীর গোশত অমুসলিমদেরকে ও দেয়া যাবে বলে শরীয়তে বলা হয়েছে। সুতরাং কুরবানীর বিধান আল্লাহ প্রদত্ত দুনিয়ার সকল মানুষের জন্যই একটি বিশেষ রহমতের বিধান।


৩.
প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পশু কুরবানী করা সত্বেও পরবর্তী এক বছরের মধ্যে আবার কুরবানী দেয়ার মতো পশুতে দুনিয়া ভরে উঠে। আবহমান কাল থেকেই এরকম হয়ে আসছে। এর কারণ হলো কুরবানীর পশু গুলোর প্রতি উপযুক্ত যতœ নেয়া হয়। এ পশু গুলোর উপযুক্ত তদবীর করার ফলে বরকত দেখা যায়। আর যে সব পশুর তদবীর করা হয় না তার বরকত ও দেখা যায় না।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বিড়াল ও কুকুর একবার কয়েকটি বাচ্চা প্রসব করে অথচ বিড়াল ও কুকুরের সংখ্যা দুনিয়ায় খুব বেশী দেখা যায় না।

অপর পক্ষে গরু একবার একটা বাচ্চা দেয়, তা সত্বেও দুনিয়ায় বিপুল সংখ্যক গরু দেখা যায়। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক গরু কুরবানী দেয়া সত্বেও তা বিলীন হয়ে যায় না। বরকতের জন্যেই এরূপ হয়ে থাকে। আর এটা আল্লাহর একটি বিশেষ রহমত ছাড়া আর কিছুই না।


কুরবানীর শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ


১.
প্রকৃত মুসলমান হতে হলে আল্লাহর হুকুম যেরকমই হোক না কেন তা বিনা বাক্যে মেনে নিতে হবে। তার পরিণাম ভাল কি মন্দ তা চিন্তাও করা যাবে না, কারণ, তা আল্লাহর হুকুম। আর আল্লাহর হুকুম মেনে নিলে তার ফল কোন দিন ও মন্দ হয় না।
২.
আল্লাহর হুকুম সহজই হোক আর কঠিনই হোক তা মেনে চলার ব্যাপারে মনের ঝোঁক প্রবণতা একই প্রকার থাকতে হবে। কারণ, মানব জীবনের চরম লক্ষ্যই হচ্ছে আল্লাহর যাবতীয় হুকুম আহকাম মেনে চলে সর্বদাই আল্লাহকে রাজী খুশী রাখা। কাজেই মুসলমানদের মনের ঝোঁক সর্বদাই এমন থাকতে হবে যে, আল্লাহর হুকুম মানতে গিয়ে বাঁচলে ও জীবন সফল, মরলেও জীবন সার্থক।
৩.
আল্লাহর হুকুম মানার ব্যপারে পার্থিব কোন লাভ-লোকসান, কোন মায়া-মুহাব্বত, কামনা-বাসনা বা যে কোন কিছুর প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না। এটাই প্রকৃত মৃসলমানী।
যেমন হযরত ইবরাহীম আ. রাজী হয়েছেন
@ আগুনের কুন্ডে নিক্ষিপ্ত হতে। @ সদ্যজাত শিশু সন্তানকে তার মা সহ বিজন মরুভূমির মধ্যে রেখে আসতে। @ নিজ হাতে নিজের সন্তানকে কুরবানী করতে, কোন বাঁধাই প্রতিবন্ধক হতে পারেনি।

৪.
বছরে মাত্র একবারই আমরা কুরবানী দেই। কিন্তু এর ফল সুদূরপ্রসারী। কুরবানী আমাদের জন্য ত্যাগ ও তিতিক্ষার একটি ট্রেনিং এর ব্যবস্থা ও বটে।
উল্লেখ্য যে, ত্যাগ ও কুরবানী ছাড়া কোন ভাল কাজই সম্পন্ন হতে পারে না। চাই আল্লাহর হক হউক আর বান্দার হকই হউক।
৫.
আমাদের দ্বীন দুনিয়ায় উন্নতি ও অগ্রগতি আমাদের সালফে সালেহীনদের কুরবানীর ফসল, যা আমরা ভোগ করতেছি। তাই পরবর্তী প্রজন্মের কল্যাণের জন্যে আমাদেরকে সেই ভাবে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।


কুরবানী মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্যের প্রতীক


সারা দুনিয়ার মুসলমান ঈদুল আয্হার দিন কুরবানী করার মাধ্যমে এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, তারা এক উম্মাহর অন্তর্ভূক্ত। কেবলমাত্র আল্লাহর নামে পশু কুরবানী করে তারা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ই তাদের মালিক। তিনি তাদের মা’বুদ, তিনি তাদের রব। তাঁর আইন ছাড়া আর কারো বিধান তারা মানে না।

ইসলামী শরীয়াতের বিধান অনুযায়ী কুরবানী করে তারা এ কথা প্রমাণ করে যে, ইসলামই তাদের জীবনাদর্শ, এটাই তাদের চলার পথ। এটাই হচ্ছে তাদের জীবন বিধান। তারা ইসলাম ছাড়া অন্য কোন পথ ও মত মানতে রাজী নয়। মুহাম্মদ সা. এর সুন্নাতের ভিত্তিতে কুরবানী করে তারা এ কাথারই সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি তাদের একমাত্র রাহবর ও পথ প্রদর্শক, তাঁকে ছাড়া কারো অনুসরণ ও অনুকরণ করতে তারা রাজী নয়। মোট কথা কুরবানী মুসলিম উম্মাহ্র এক শক্তিশালী ঐক্যের প্রতীক।


কুরবানীর দাবী ও আহবান এবং মুসলিম উম্মাহর করণীয়


বছর পরিক্রমায় কুরবানীর ঈদ এসে হাজির হয় মুসলিম জাতিকে হযরত ইবরাহীম আ. এর ত্যাগের চেতনায় নতুন ভাবে উজ্জীবিত করতে।

কুরবানীর সাথে জড়িত রয়েছে হযরত ইবরাহীম আ. এর তাওহীদবাদী জীবন ও একটি জাতি গঠনের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতহাস।
হযরত ইবরাহীম আ. কে আল্লাহ পাক এ শাশ্বত পয়গাম, চিরন্তন ইমামত ও নেতৃত্বের সম্মান দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। এক নতুন জগতের বিনির্মাণের মহান উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে প্রস্তুত করেছিলেন।
তিনি তদানীন্তন সমাজের বিশ্বাস, ধর্মীয় আবেগ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মহাবিদ্রোহ সূচনা করলেন। যার ফলে তাঁকে কঠিন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন:
১. নমরূদ কর্তৃক প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়া।
২. তাওহীদের হেফাজতের প্রয়োজনে চিরদিনের জন্য প্রিয় জন্ম ভূমি ত্যাগ করা।
৩. আল্লাহর নির্দেশে জনশূণ্য মরু-মক্কায় স্ত্রী হাজেরা ও কোলের শিশু ইসমাঈল কে রেখে যাওয়া ইত্যাদি ছিল বিশ্ব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও মুসলিম জাতি গঠনের যোগ্যতা অর্জনের বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষা।
৪. হযরত ইবরাহীম আ. এর জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা, প্রেমের অগ্নি পরীক্ষা এলো চুড়ান্ত পর্যায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ দেখতে চাইলেন তাঁর খলীলের ভালবাসা তাঁর প্রতি কতটা একনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল। তাই নির্দেশ এলো কলিজার টুকরা ইসমাঈলকে কুরবানী করে দাও। নির্দেশ পাওয়া মাত্র তিনি প্রস্তুত হলেন আল্লাহর ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য। পুত্র ইসমাঈলকে তিনি জানিয়ে দিলেন আল্লাহর ইচ্ছার কথা। বালক ইসমাঈল আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজেকে কুরবানীর জন্য পেশ করে দিলেন। আল্লাহর নামে কুরবানী হওয়া, আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় সন্তানের কুরবানী দেয়া, উভয়ই ছিল আল্লাহর প্রেমের উজ্জল ¯িœগ্ধতায় শুভ্র সমুজ্জল। শয়তানের প্ররোচনায় পার্থীব মায়া-মমতা উপেক্ষা করে প্রত্যয় দীপ্ত পদক্ষেপে তাঁরা এগিয়ে গেলেন তাদের লক্ষ্যে। মিনা প্রান্তরে তপ্ত বালুতে পরম যতেœ প্রিয় পুত্রকে শুইয়ে দিলেন পিতা ইবরাহীম আ.। পূর্ণ শক্তিতে তীক্ষè শানিত ছুরি চালালেন পুত্রের গলায়। আল্লাহর মহাপরীক্ষা সফল হলো, ইবরাহীম আ. উত্তীর্ণ হলেন।

আল্লাহর প্রেমের এমন ঘটনাকে চির অমর করার উদ্দেশ্যে, এমন কুরবানীর প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য আল্লাহ প্রতি বছর ঈদুল আয্হার দিনগুলোতে সকল মুসলমানদের জন্য এই কুরবানীর বিধান কে এক উত্তম ইবাদত হিসেবে ওয়াজিব করে দিলেন।


ঈদুল আয্হার উৎসব ভুরিভোজনের কোন উৎসব নয়! বরং খোদাদ্রোহী তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রথম পাঠ-প্রথম সবক। এ পাঠকে মুসলমান জাতির জন্য ওয়াজিব তো এজন্যই করে দেয়া হয়েছে, যেন তারা এই ঈদ উৎসবের মাধ্যমে আল্লাহর রাহে প্রাণ দেয়ার উৎসাহ পায়, সাহস অর্জন করে। হযরত ইবরাহীম ও হযরত ইসমাঈলের এ অভূতপূর্ব দৃশ্য বারবার ভেসে উঠে পবিত্র ঈদে মুসলমানদের মানস পটে।

কুরবানীর আগমন ঘটে মুসলমান জাতির অন্তরে এ জীবন অনুভূতি জাগ্রত করার জন্য যে, ঈমান ও তাওহীদের পথে তাদের এ জীবন হচ্ছে দুনিয়ার সকল অপশক্তি ও শয়তানী চক্রের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম ও সংঘাতের জীবন।
এই কুরবানী আহবান জানায় মুসলমান জাতিকে শক্তিশালী ঈমান, নির্ভেজাল প্রেম এবং নজীরবিহীন ত্যাগ ও কুরবানীর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে অন্যায় , অসত্য ও খোদাদ্রোহী তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণায়।

আল্লাহর কাছে কুরবানীর পশুর রক্ত মাংস কিছুই পৌঁছেনা। বরং আল্লাহর কাছে পৌঁছে বান্দার তাকওয়া, আন্তরিকতা ও একাগ্রতা। যেহেতু আজ আমাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি মহব্বত অনুপস্থিত, নিয়তের প্রবিত্রতা কলুষিত তাই কুরবানীর রক্ত শুধু জমিনই লাল করছে, আমাদের হৃদয়কে আল্লাহর মহব্বতে রঞ্জিত করছেনা। সে জন্য আমাদের কুরবানী আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে, যা আমাদেরকে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার হিম্মত জোগাচ্ছেনা।

জাতির সত্যিকার কল্যাণ করতে হলে ত্যাগ করতে হবে হযরত ইবরাহীমের আ. মতো। আজ আমরা ইবরাহীমী কুরবানীকে ভূলে গেছি। আজ তাই গোটা বিশ্বে মুসলমানদের করুণ দশা। আমাদের কুরবানীর অবস্থা দেখে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বলেছিলেন,

“ঈদের নামায আমাদের শিখিয়েছে সত্যিকার কুরবানী করলেই মিলবে নিত্যানন্দ। আমরা গরু-ছাগল কুরবানী করে খোদাকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করছি। তাতে করে আমরা নিজেদেরকেই ফাঁকি দিচ্ছি। আমাদের মনের ভিতরে যে সব পাপ, অন্যায় স্বার্থপরতা ও কুসংস্কারের গরু-ছাগল যা আমাদের সৎবৃত্তির ঘাস খেয়ে আমাদের মনকে মরুভূমি করে ফেলেছে, আসলে কুরবানী করতে হবে সেই সব গরু-ছাগলের। হযরত ইবরাহীম আ. নিজের প্রাণতুল্য পুত্রকে কুরবানী করে দিলেন বলেই তিনি নিত্যানন্দের অধিকারী হয়েছিলেন। আমরা তা করিনি বলেই আমরা কুরবানী শেষ করে চিড়িয়াখানায় যাই তামাসা দেখতে। আমি বলি ঈদ করে যারা চিড়িয়াখানায় যায়, তারা চিড়িয়াখানায় থেকে যায় না কেন?


মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ জনতাকে নজরুলের ভাষায় চিড়িয়াখানায় আশ্রয় নেবার সময় এসেছে। কারণ, আজো আমরা কুরবানীর পশুর গলায় ছুির চালাতে গিয়ে মুখে উচ্চারণ করি -


اِنَّ صَلوتِىْ وَ نُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِىْ للهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ “আমার সব প্রার্থণা নামায, রোযা, তাপস্য, জীবন-মরণ সব কিছু বিশ্বের একমাত্র পরম প্রভূ আল্লাহর পবিত্র নামে নিবেদিত”।


কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো অন্তরে এর কোন অনুভূতিই নেই। যখন মুসলমানদের কুরবানীতে হযরত ইবরাহীম আ. ও হযরত ইসমাঈল আ. এর ত্যাগের অনুভূতি বিদ্যমান ছিল তখন দেখেছি ওহুদের যুদ্ধে, বদরের ময়দানে, খায়বরের জঙ্গে মুসলমানদের বিজয়। দেখেছি হযরত ওমর ফারুক রা. এর বিশ্ব বিজয়ী বাহিনীকে অগ্রসৈনিক রূপে, দেখেছি দূর আফ্রিকায় মুসা, তারিকের, মিশরের পিরামিডের পার্শ্বে, ইরান মুলুকের আলবোর্জের জিব্রাল্টারের উত্তুঙ্গ জলরাশির মধ্যে নাঙ্গা শমশের হাতে মুসলিম সেনাদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে। দেখেছি ক্রুসেডের রণে, জেহাদের জঙ্গে সুলতান সালাউদ্দীনের বিজয়।

আজ আল্লাহর রাহে কুরবানীর চেতনায় ইবরাহীমী জযবা নেই বিধায় গোটা বিশ্বব্যাপী মুসলমান চরম ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আজ মা হাজেরার অনুপ্রেরণায় শত শত মা তাদের কচি-কচি সন্তানকে শুধু মাত্র ঈমানী জযবায় শহীদী ঈদগাহে পাঠাচ্ছেন। শত শত নারী-পুরুষ জীবন বিলাচ্ছে তাদের ঈমান, ইজ্জত রক্ষা করতে। আর বিচ্ছিন্ন ভাবে নয়, শক্তিমান দানবদের উৎপাত থামাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে এক হয়ে জান-মালের কুরবানীর জন্য এগিয়ে আসতে হবে। শুধু মাত্র গরু কুরবানী করেই আল্লাহ কে ফাঁকি দিলে গোটা জাতি ফাঁকির অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে।

মুসলামান জাতিকে স্মরণ করা প্রয়োজন রাসূল সা. ও সাহাবাদের কুরবানীর ইতিহাস। তাঁদের কুরবানীর অন্যতম ইতিহাস হোদায়বিয়ার প্রান্তরের কুরবানী। হোদায়বিয়ার প্রান্তরে একদিকে রাসূল সা. এর সাথে নিয়ে আসা কুরবানীর পশুগুলোকে কুরবানী দিলেন, অন্য দিকে শত্রুদেশে এসে একদল মুসলামানের সত্যের জন্য আতœদানের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এই দ্বিবিধ কুরবানীর ফলে মুসলমানদের জন্য আল্লাহ কবুল করলেন “ফতহে মুবীন” সুস্পষ্ট বিজয়।

কুরবানীর শিক্ষাকে সার্থক করার জন্য আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন গোটা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ কে সম্মিলিত হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া। যে উখ্ওয়াত-সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব, যে একতা ছিল মুসলিমের আদর্শ যার জোরে মুসলিম জাতি এক শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবী জয় করেছিল, আজ আমাদের সে একতা নেই তারা হিংসায়, ঈর্ষায়, কলহে ঐক্যহীন বিচ্ছিন্ন, এই বিচ্ছিন্নতার সুযোগ গ্রহণ করেছে ইসলামের শত্রুরা।


মুসলমানদের বিজয়ের পেছনে ছিল ঐক্যবদ্ধতা, মৃত্যু ভয়হীনতা ও আল্লাহর রাহে জানমালের কুরবানী। এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মুসলমানেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

রাসূলুল্লাহ সা. মুসলমানদেরকে সাবধান করে বলেছেন : শিঘ্রই আমার উম্মতের উপর এমন একটি দু:সময় আসবে যখন দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতি তাদের দিকে এমন ভাবে ধাবিত হবে যেমন ধাবিত হয় ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্যের দিকে। সাহাবাদের কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, তখন আমরা সংখ্যায় এতোই কম থাকবো? (যে অন্যান্য জাতিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদেরকে গিলে ফেলার জন্য ছুটে আসবে?) রাসূলুল্লাহ সা. বললেন: না, সেদিন তোমাদের সংখ্যা কম হবেনা বরং তোমরা সংখ্যায় অধিক হবে। কিন্তু তোমরা হবে বন্যার পানির ফেনার সমতুল্য। অবশ্যই আল্লাহ সে সময় তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভীতি দূর করে দেবেন এবং তোমাদের মনে তাদের ভয় সৃষ্টি করে দেবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন : হুজুর! আমাদের মনে এ দূর্বলতা ও ভীতি দেখা দেয়ার কারণ কি হবে?
রাসূলুল্লাহ সা. বললেন -

حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَا هِيَةُ الْمَوْتُ দুনিয়া প্রীতি ও মৃত্যুভীতি। অর্থাৎ সেদিন তোমরা দুনিয়াকে ভালোবাসবে, দুনিয়াকে আঁকড়ে ধরবে এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ পরিত্যাগ করবে।
{ সুনানে আবু দাউদ, সূত্র: হযরত সাওবান রা. হতে বর্ণিত।}

রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। আজ গোটা মুসলিম বিশ্বকে জয় করে নিচ্ছে ইহুদী,নাসারা ও মুশরিক ঐক্যবদ্ধ শক্তি। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে মুসলমানদের ঈদগাহে আসতে হবে শুধু কুরবানীর পশু নিয়ে নয়, বরং রাসূলের আদর্শে আদর্শিত হয়ে নিজেদের জান-মাল কে আল্লাহর রাহে কুরবানীর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে।

বর্তমান বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে কুরবানী আহবান জানায় শক্তিশালী ঈমান, নির্ভেজাল প্রেম এবং নজীর বিহীন ত্যাগ ও কুরবানীর ইবরাহীমী আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে বদ্ধমুল কুসংস্কার, অসত্য কুফরীও তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করার। কুরবানীর এ আহবানে সাড়া দিতে পারলেই এক নতুন সাজে সজ্জিত এবং নতুন প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবে তাওহীদবাদী গোট মুসলিম উম্মাহ্। বিজয় মুসলমানদেরই হবে ইন্শাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন -

وَ لَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ- “আর তোমরা নিরাশ হয়োনা এবং দুঃখ করোনা। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই বিজয়ী হবে।
{ সূরা আলে ইমরান -১৩৯।}

মহান আল্লাহ আরো বলেন -

وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ “মুমিনদের সাহায্য করা আল্লাহর জন্য অবশ্য কর্তব্য হয়ে যায়”।
{ সূরা আর রূম -৪৭।}

মহান আল্লাহ আরো ঘোষণা করেন -

اَلَا اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ- “ সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই”।
{ সূরা আল বাকারাহ -২১৪।}

জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বলেছিলেন -


“ভেঙ্গেছে দুয়ার, জেগেছে জোয়ার, রেঙেছে পূর্বাচল, খুলে গেছে দেখ দুর্গতি ভরা দুর্গের অর্গল। মৃত্যুর মাঝে অমৃত যিনি এনেছে তার বাণী, পেয়েছি তাহার পরমাশ্রয়, আর ভয় নাহি মানি। সকল ভয়ের মাঝে রাজে যার পরম অভয় কোল, সেই কোলে যেতে আয়রে কে দিবি মরণ দোলাতে দোল।”


আসুন! আমরা মুসলিম উম্মাহ্ ঈদুল আয্হায় কুরবানীর পবিত্র উৎসবে সেই মরণ দোলাতে দোল দিয়ে বিশ্বকে বাঁচাই ।


ইনশা আল্লাহ ধারাবাহিক ভাবে চলবে।

ঈদুল আযহা ও কুরবানীর তাৎপর্য এবং কুরবানীর মাসায়েল। ৩য় কিস্তি {যিলহজ্জ মাসের করনীয় কাজ}।

بسم الله الرحمن الرحيم


اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ والصَّلوةُ و السَّلاَمُ عَلى اَشْرَفِ الْاَنْبِياءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَعَلى اَلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِيْنَ





ঈদুল আয্হা ও কুরবানীর ফাযায়িল ও মাসায়িল


যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ফযীলত




হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণীত, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন :


مَا مِنْ اَيَّامٍ اَحَبُّ اِلَى اللهِ اَنْ يُّتَعَبَّدَلَه فِيْهَا مِنْ عَشْرِذِى الْحَجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِّنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِّنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ

“আল্লাহর ইবাদতের জন্য যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের চেয়ে অধিক উত্তম আর কোন দিন নেই। উহার প্রতি দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমান আর এতে প্রতি রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমতুল্য ছওয়াব রাখে”।
{ সুনানে আত তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত-১২৮ পৃ}

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন :


مَا مِنْ اَ يَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِـحُ فِيْهِنَّ اَحَبُّ اِلَى اللهِ مِنْ هذِهِ الْاَيَّامِ الْعَشْرَةِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ للهِ وَلَا الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ وَلَا الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ للهِ- اِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَـفْسِه وَمَالِه فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذالِكَ بِشَىْءٍ

“এমন কোন দিন নেই যে দিনের কৃত নেক আমল এসব দিন অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমলের মত আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়। ছাহাবাগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদের নেক আমলও কি নয়? তিনি বললেন না, আল্লাহর পথে জিহাদের মত নেক আমল ও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হন এবং এর কোনটা নিয়েই ফিরে আসলো না। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির এ আমল আল্লাহর কাছে অনুরূপ প্রিয়”।
{ সহীহ আল বুখারী।}

উল্লেখ্য যে, আল কুরআনে সূরায়ে আল ফজরের মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা দশটি রাতের শপথ করেছেন, অধিকাংশ তাফসীর কারকদের মতে যিল হজ্জের প্রথম দশ রাতকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। { তাফসীরে মাযহারী, মাআরেফুল কুরআন।}


যিল হজ্জ মাসের নবম দিবস তথা আরফার দিনের ফযীলত

হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. বলেন রাসূলুল্লাহ সা. কে আরফার দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো । তিনি জবাবে বললেন
صِيَامُ يَوْمِ عَرفَةَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِىْ بَعْدَه
“আমি আল্লাহর সত্তা থেকে এ আশা রাখি যে, এতে বিগত বছরের ও আগামী বছরের গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে”।
{ সহীহ আল মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, মিশকাত -১৭৯পৃ}
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, আরফার দিনের রোযার ছওয়াব এক হাজার দিনের রোযার সমান। { আত তারগীব।}

একটি জিজ্ঞাসা - রমজানের শেষ দশক অধিক ফযীলতপূর্ণ নাকি যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন বেশী ফযীলতপূর্ণ ?

জবাব: আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. এক্ষেত্রে সুন্দর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ। কারণ, তাতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। অপর দিকে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের দিবস সমূহ অধিকতর ফযীলতপূর্ণ। কারণ, এদিনগুলোতে হজ্জের তালবীয়াহ এর দিন, কুরবানীর দিন রয়েছে।{ যাদুল মাআদ - ইবনে কায়্যিম রহ.। }


যিলহজ্জ এর চাঁদ দেখার পর বিশেষ মুস্তাহাব আমল


যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল, মোঁচ, নখ, বগল ও অন্যান্য স্থান সমূহের লোম না কাটা মুস্তাহাব। হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত। নবী করীম সা. বলেছেন :

مَنْ رَئ هِلَالَ ذِى الْحَجَّةِ وَاَرَادَ اَنْ يُّضَحِّىَ فَلَا يَأْخُذْ مِنْ شَعْرِه وَلَا مِنْ اَظْفَارِه
“যে ব্যক্তি যিলহজ্জের চাঁদ দেখে এবং কোরবানীর ইচ্ছা করে সে যতক্ষণ না কুরবানী করেছে, ততোক্ষণ চুল ও নখ না কাটে”।
{ সহীহ আল মুসলিম, মিশকাত-১২৭পৃ।}
এ আমল মাসনূন, ওয়াজিব নয়। ইসলামের ফিকাহ বিশারদগণ বলেছেন ঃ কুরবানী দাতার নখ, চুল, গোফ ইত্যাদি না কাটার পিছনে হিকমত হচ্ছে, হাজীদের সাদৃশ্য ধারণ করা। বলা বহুল্য যে, হাজী সাহেবানদের ইহরাম-বাঁধা অবস্থায় নখ, চুল, গোফ কর্তন না করা এবং এলোমেলো চুল, গোফ ইত্যাদি অপরিমার্জিত আল্লাহর প্রেমে পাগলপাড়া অবস্থাটি আল্লাহর নিকট অত্যাধিক প্রিয়। তাই উক্ত হাদীসে কুরবানী দাতাগণকে আল্লাহর সেই প্রেমিক দেওয়ানাদের সাদৃশ্য অবলম্বনে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, পশু কুরবানীর সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন, এ জন্য এ নির্র্দেশ দেয়া হয়েছে।
যার কুরবানীর করার সামর্থ নেই, তার জন্যও এটা ভালো যে, সে কুরবানীর পরিবর্তে তার চুল কাটবে, নখ কাটবে এবং নাভীর নীচের চুল সাফ করবে। একাজ তার কুরবানীর স্থালাভীষিক্ত হবে। { সুনানে আবু দাউদ নাসায়ী।}

যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে- জনৈক ছাহাবী রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো একটি দুধালু উষ্ট্রি বা ছাগী ছাড়া আর অন্য কিছু নেই। আমি কি উহা দ্বারা কুরবানী করব? দয়ার নবী সা. বললেন না, অতঃপর ইরশাদ করলেন,


خُذْ مِنْ شَعْرِكَ وَ اَظْفَارِكَ وَ تَحْلُقْ عَانِتَكَ فَذلِكَ تَمَامُ اُضْحِيَّتِكَ

“ বরং তুমি কুরবানীর দিন স্বীয় নখ, চুল, গোফ ও তলদেশের চুল সাফ কর। এটি তোমার কুরবানী বলে গণ্য হবে”।
{ সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী, মিশকাত।}

তাকবীরে তাশরীকের মাসআলা


যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামায থেকে ১৩ তারিখের আসরের নামায পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব।

এটা ফরয নামাযের পর প্রত্যেক বালিগ পুরুষ মহিলা, মুকীম, মুসাফির, গ্রামবাসী, শহরবাসী, জামায়াতের সাথে নামায পড়ুক বা একাকী পড়–ক প্রত্যেকের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হবে। { ফাতাওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক।}
একবারের অধিক তাকবীর বলবে না কারণ, একের অধিক বলার কথা শরীয়তে নেই। { তাহতাবী. পৃষ্ঠা-২৯৪।}

তাবকীরে তাশরীক হচ্ছে
اللهُ اَكْبَرُ – اللهُ اَكْبَرُ، لَا اِلَهَ اِلَّااللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – اللهُ اَكْبَرُ وَللهِ الْحَمْدُ - উচ্চারণ: আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।
যিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখকে আরাফার দিন বলে, দশ তারিখকে ইয়াওমুন নাহার বা কুরবানীর দিন বলা হয়।

তাকবীরে তাশরীকের গোড়ার কথা


সহীহ্ আল বুখারীর ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. মবসুত ও কাজীখান কিতাবদ্বয় থেকে ‘হেদায়া ’ কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থে নকল করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম আ. আপন পুত্র ইসমাঈল আ. কে যখন কুরবানী করতে শুরু কররেন, তখন হযরত জিবরাইল আ. আল্লাহর নির্দেশে বেহেশ্ত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হলেন। তাঁর সংশয় হচ্ছিল পৃথিবীতে পদার্পন করার পূর্বেই হযরত ইবরাহীম আ. যবেহ কার্য সম্পন্ন করে ফেলবেন। তাই হযরত জিবরাইল আ. আকাশ থেকেই উচ্চস্বরে ধ্বনী দিতে থাকেন - الله اكبر- الله اكبر । হযরত ইবরাহীম আ. তাঁর আওয়াজ শুনে আকাশ পানে দৃষ্টি করে দেখতে পেলেন যে, উপস্থিত কুরবানীর বস্তু ইসমাঈল আ.-এর পরিবর্তে তিনি একটি দুম্বা নিয়ে আসছেন। তাই তিনি স্বতস্ফুর্তভাবে বলে উঠলেন -لا اله الاالله والله اكبر পিতার মুখে তাওহীদের এ অমূল্যবাণী শুনতে পেয়ে হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহর মহাত্ম, মর্যাদা ও শান শওকতের উপর হামদ পেশ করে বললেন : الله اكبر ولله الحمد একজন মহান আল্লাহর ফেরেশতা, একজন নবী ও একজন ভাবী নবী এ তিন মহান ব্যক্তিত্বের খুশীর আবেগে উচ্চারিত এ আমলটুকু ও পবিত্র কালামগুলো আল্লাহর দরবারে এত বেশী কবুল হল যে, কিয়ামত পর্যন্ত ঈদুল আয্হায় বিশ্ব মুসলিমের কন্ঠে কন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে।


তাকবীর সম্পর্কে আরো কতিপয় মাসায়েল

১. ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে ও মুক্তাদীর তাকবীর বলা ওয়াজিব। { ফাতওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড ৭৭৭ পৃষ্ঠা।}
২. পুরুষেরা তাকবীর উচ্চ-মধ্যম স্বরে আর মহিলাগণ অনুচ্চস্বরে বলবে। পুরুষ উচ্চ স্বরে না পড়ে আস্তে আস্তে পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না।
৩. মাসবুক তার নামায আদায় করে তাকবীর বলবে। { ফাতাওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড-৭৮৬পৃষ্ঠা।}
৪. যদি মুসল্লী ফরয নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে যায়। এবং কিছু কাজ করে ফেলে যার দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায় (যেমন মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, অথবা ভূলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা) তবে তার উপর থেকে তাকবীর বলা রহিত হয়ে যাবে। { ফাতাওয়া শামী ১ম খন্ড, ৭৮৬পৃ।}

ঈদুল আয্হার নামাযের বর্ণনা


১. ঈদের নামায দু’রাকায়াত। ইমাম আবু হানিফার (র.) মতে, এ নামায ওয়াজিব।{ বুখারী ও মুসলিম।} ২. নামাযান্তে মিম্বরে ঊঠে ইমাম সাহেব দু’টি খুৎবাহ প্রদান করবেন। এ খুৎবাহ সুন্নাত। আর মুক্তাদীদের জন্য শ্রবণ করা ওয়াজিব। { সহীহ আল বুখারী ও সহীহ আল মুসলিম।} ৩. ঈদের নামাযে আযান ও ইকামত নেই। { সহীহ্ আল মুসলীম।} ৪. মহিলাদের জন্য ঈদের নামায নেই।{ সহীহ আল বুখারী ও সহীহ আল মুসলিম।} ৫. ঈদের নামায মাঠে আদায় করা সুন্নাত। কেবল বৃষ্টি বা অন্য কোন শরয়ী ওযর থাকলে মসজিদে আদায় করা যায়। { সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ।} ৬. সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈদের নামাযের সময়। কিন্তু ঈদুল আয্হার নামায ঈদুল ফিতরের নামায হতে অধিক সকালে আদায় করা সুন্নাত। যাতে মুসলমানগণ কুরবানী করে কুরবানীর গোশত দিয়ে সেদিনের খানা শুরু করতে পারে। { মিশকাতুল মাসাবীহ।} ৭. ঈদের নামাযে হানাফী মাযহাব মতে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর দেয়া ওয়াজিব।


ঈদের নামায আদায় করার নিয়ম


“আমি ঈদুল আযহার দু’রাকায়াত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীর সহকারে এই ইমামের পিছনে কিবলামূখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে আদায় করছি।” এ নিয়ত মনে মনে স্থির করবে অথবা মুখে বলবে। তারপর তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাধঁবে এবং ছানা পাঠ করবে। ছানা পাঠ করার পর অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর দিবে এভাবে যে, তিনটি তাকবীরের সময়ই কান পর্যন্ত হাত উঠাবে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরের পরে হাত ছেড়ে দিবে আর ৩য় তাকবীর বলে হাত বেঁধে ফেলবে। এর পর ঈমাম সূরা ফাতিহা ও কিরাআত সমাপ্ত করে যথারীতি রুকু সিজদা করে প্রথম রাকাআত শেষ করে পুনরায় দাঁড়িয়ে ২য় রাকাআতের কিরাত শেষ করবে।

অতঃপর রুকুতে যাবার পূর্বে আবার অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর দিবে এভাবে যে, কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তাকবীর বলে হাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর তথা রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাবে। এর পর অবশিষ্ট নামায যথারীতি আদায় করে ছালাম ফিরাবে। তারপর ঈমাম সাহেব মিম্বরে উঠে দুটি খুৎবাহ পড়বেন।
মাসআলা :
ঈদের নামাযের পূর্বে ঘরে বা মাঠে কোথাও নফল নামায পড়া মাকরূহ। এমনকি মহিলা সহ ঐ সমস্ত লোক যারা কোন ওজরের কারণে ঈদের নামাযে শরীক হতে পারেনি, তাদের জন্যও ঈদের নামাযের আগে নফল নামায পড়া মাকরূহ, হ্যাঁ নামাযের পর ঘরে নফল নামায আদায় করতে পারবে। { ফাতওয়ায়ে শামী।}
মাসআলা :
কেউ ঈদের নামায পড়তে পারলনা বা পড়ার পর কোন কারণে বাতিল হল, তখন আর ক্বাজা পড়া যাবে না।{ মারাকিউল ফালাহ।}
মাসআলা :
যদি ঈদের নামাযের জামায়াত বড় হয় আর কোন কারণ বশত: যদি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়, তাহলে সাহু সিজদা দেয়া জরুরী নয়।

ঈদুল আয্হার দিনের করণীয় ও সুন্নাত আমল সমূহ :

১. সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী শারীয়ত সম্মত ভাবে সাজ পোশাকের ব্যবস্থা করা এবং খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করা। ২. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা। ৩. মিসওয়াক করা। ৪. ফজরের নামাযের পর ঈদের নামাযের জন্য গোসল করা। ৫. যথা সম্ভব উত্তম ও পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় পরিধান করা। ৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৭. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। ৮. ঈদগাহে কিছু না খেয়ে যাওয়া এবং কুরবানীর গোশত দ্বারা সে দিনের খানা শুরু করা মুস্তাহাব। ৯. ঈদের নামায ঈদগাহে পড়া। ১০. কোন ওজর না থাকলে, পায়ে ঁেহটে ঈদগাহে যাওয়া, ১১. ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া, অন্যপথে ফেরা। ১২. ঈদগাহে যাবার সময় তাকবীরে তাশরীক উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত। ১৩. ঈদুল আয্হার নামায ঈদুল ফিতর হতে অধিক সকালে পড়া। ১৪. ঈদের নামায আদায়ের পর সাহিবে নিসাবের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। ১৫. ঈদের নামাযের আগে ঘরে বা ঈদগাহে নফল নামাজ না পড়া। ১৬. ঈদের নামাযের পর ঈদগাহে নফল নামায না পড়া। ১৭. আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া ও তাদের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া।


ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা :

ক. আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ ঈদের দিন সাক্ষাত কালে একে অপরকে বলতেন تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا و مِنْكَ - আল্লাহ তায়ালা আমার ও আপনার ভাল কাজ গুলো কবুল করুন।
খ.عِيْدٌ مُبَارَكٌ - ঈদ মোবারক বলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।
গ. كُلَّ عَامٍ وَاَنْتُمْ بِخَيْرٍ - প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন।

কুরবানীর অর্থ ও পরিচয় :


কুরবানী শব্দের আভিধানিক অর্থ উৎসর্গ করা, রক্ত প্রবাহিত করা, যবেহ করা, আত্মত্যাগ, অপরের জন্য ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করা।

ইসলামের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালাকে নিজের জীবন ও ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক স্বীকার করে সেই মহান মালিকের ইচ্ছানুযায়ী তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এগুলোকে তাঁরই পথে ত্যাগ করার নিদর্শন স্বরূপ নির্দিষ্ট পন্থায়, নির্দিষ্ট দিনে পশু যবেহ করার নামই হচ্ছে কুরবানী।

কুরবানীর শরয়ী মর্যাদা :


সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ এবং রাসূলে কারীম সা. এর দায়েমী আমলী সুন্নাত। নবী করীম সা. মদীনায় দশ বছর অবস্থান কালে প্রতি বছর কুরবানী করেছেন। এবং সাহাবীদের কে কুরবানী করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

কুরবানীর ফযীলত ও মহাত্ম্য :


১.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন :
اَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلعم بِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ يُضَحِّىْ-
“রাসূলে কারীম সা. মদীনায় দশ বৎসর জীবন যাপন করেছেন সেখানে প্রত্যেক বৎসরই তিনি কুরবানী করেছেন”।{ সুনানে আত তিরমিয়ী।}

২.
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন :
مَنْ كَانَ لَه سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرُبَنَّ مُصَلَّانَا-
“যে ব্যক্তি কুরবানী করার সামর্র্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করলনা, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছে ও না আসে”। { সুনানে ইবনে মাজাহ (কিতাবুল আদ্বাহী)।}

৩.
হযরত জায়িদ ইবনে আরকাম রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন :
قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا هذِهِ الْاَ ضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ- قَالُوْا فَمَا لَنَـا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ- قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِّنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ-
“রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানীটা কি? রাসূলুল্লাহ সা. জবাব দিলেন, এটা তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত বা আদর্শ। অতঃপর তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কি ফায়দা বা, সাওয়াব রয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়া, দুম্বার পশমের ব্যপারে কি কথা? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে ও একটি করে নেকী পাওয়া যাবে”। { সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ-১২৯পৃষ্ঠা।}

৪.
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন :
مَا عَمِلَ ابْنُ ادَمَ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ اَحَبَّ اِلَى اللهِ مِنْ اِهْراقِ الدَّمِ وَاِنَّه لَيَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِهاَ وَاَشْعَارِهَا وَاَظْلاَ فِهَا- وَاِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِـمَكَانٍ قَبْلَ اَنْ يَّقَعَ فِى الْاَرْضِ- فَطِيْبُوْابِهَا نَفْسَهاَ-
“মানুষের আমল সমূহ হতে কোন আমলেই আল্লাহর নিকট কুরবানীর দিন কুরবানী হতে অধিক পছন্দনীয় নয়, অবশ্যই কিয়ামতের দিন কুরবানীর জানোয়ার শিং, লোম ও খুর নিয়ে উপস্থিত হবে। যে কুরবানী শুধু আল্লাহর জন্য করা হয়, নিশ্চয়ই সেই কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে উহা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা ভক্তি ও আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে কুরবানী কর”।{ সুনানে আত তিরমিযী।}

৫.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন নবী করীম সা. হযরত ফাতেমা যোহরা রা. কে বললেন,ফাতেমা! এসো তোমার কুরবানীর পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাক। এ জন্য যে, তার যে রক্ত কণা মাটিতে পড়বে তার বদলায় আল্লাহ তোমার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। হযরত ফাতেমা রা. বলেন, এ সুসংবাদ কি আহলে বায়তের জন্য নির্দিষ্ট, না সকল উম্মতের জন্যে? নবী বললেন, আমাদের আহলে বায়তের জন্যেও এবং সকল উম্মতের জন্যেও।{ জামেউল ফাওয়ায়েদ, আসান ফিকাহ।}

জ্ঞানের কথা জ্ঞানীর কথা-২

জ্ঞানের কথা জ্ঞানীর কথা-১
উপকারী কিছু আরবী প্রবাদের বাংলা অনুবাদঃ-
۞ পৃথিবীটা লবণাক্ত পানির মত। যতই তা পান করবে পিপাসা ততই বাড়বে।

۞ তুমি পাহাড়ের চুড়ার মত হইয়ো না। কারণ, এতে তুমি মানুষকে ছোট দেখবে আর মানুষও তোমাকে ছোট দেখবে।


۞ চিরকাল অন্ধকারকে গালমন্দ না করে ছোট্ট একটি বাতি জ্বালানো অনেক ভাল।


۞ সব কিছু জানা তোমার জন্য আবশ্যক নয়। কিন্তু যা কিছু বলছ তার সবটুকু সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।


۞ কুপে থুথু ফেলনা। কারণ, হয়ত কখনো তোমার এ কুপ থেকে পানি পান করার প্রয়োজন হতে পারে।


۞ গাছ থেকে যখন আপেল পড়ল তখন সবাই বলল, গাছ থেকে আপেল পড়েছে। কিন্তু সব মানুষের মধ্যে এক ব্যক্তিই শুধু জানতে চাইল কেন আপেলটি পড়েছে? (আর তার মাধ্যমেই আবিষ্কৃত হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি।)


۞ জীবন চলার পথে পড়ে আছে অসংখ্য পাথর। এতে তোমার চলার পথ যেন থেমে না যায়। বরং পাথরগুলো কুড়িয়ে তৈরি কর সাফল্যের সিঁড়ি।


۞ যে হিংসা করে সে সবার আগে নিজের ক্ষতি করে।


۞ আত্মতৃপ্তিতে ভোগা সংকীর্ণ জ্ঞানের পরিচয়।


۞ যে অল্পতে তুষ্ট থাকে তার কাছে এ পৃথিবীর সব কষ্ট সহজ হয়ে যায়।


۞ যদি নিজে নিজের ‘বিবেক’কে বড় মনে কর তবে শত্রু সৃষ্টি হবে আর যদি ‘হৃদয়’কে বড় কর তবে বন্ধু বৃদ্ধি হবে।


۞ যার ভুল হয় সে মানুষ আর যে ভুলের উপর স্থির থাকে সে শয়তান।


۞ বাকপটু ও নির্বোধের সাথে তর্কে যেও না। কারণ, বাকপটু তোমাকে কথায় পরাজিত করবে আর নির্বোধ তোমাকে কষ্ট দিবে।


আরবী থেকে অনুবাদ করেছেনঃ

জনাব আব্দুল্লাহিল হাদী

Income Per Click

YesBangla PTC


ptc earninig sites of bangladesh, any info call 01835177829

Hits: 2

Like Me USA


এই লিঙ্ক এ গিয়ে ছবিটার নিচে LIKE দিতে হবে। তারপর আপনার facebook name এবং আপনার LIKE নাম্বার পাঠিয়ে দিন এই ইমেইলে: likeme@usainc.com তারপর আপনার সাথে facebook এ যোগাযোগ করা হবে।

Hits: 35

onlineaddclick.EARN 60$ MONTHLY


YOU CAN EARN MONTHKY 50$ TO 60$ WITH TEN MINUTES WORK AT YOUR HOME.JUST INVEST ITS TRUSTY.FOR HELP: +8801713742576

Hits: 229

www.black-mail




Hits: 25

www.pink-mails




Hits: 12

www.brown-mails




Hits: 6

www.wow-mails.com




Hits: 5

www.blue-mails.com




Hits: 7

www.jimdo.com




Hits: 6

www.aoubux.com




Hits: 10

testingnew




Hits: 23

wordlinx




Hits: 7

www.onbux.com




Hits: 31

solidgoldbux




Hits: 27

buxlike




Hits: 6

bigtimebux




Hits: 10

dream-bux




Hits: 59

handbux




Hits: 9

buxstones




Hits: 28

tombux




Hits: 23

নবীদের কাহিনী

ভূমিকা:
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে পৃথিবীতে স্থিতি দান করেছেন। তিনি তাদেরকে অসহায় ও লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেননি {মুমিনূন ২৩/১১৫}। বরং ‘প্রথম মানুষ’ আদমকে তাঁর বংশধরগণের হেদায়াতের জন্য ‘প্রথম নবী’ হিসাবে প্রেরণ করেন {বাক্বারাহ ২/৩৮-৩৯}। এভাবে আদম (আলাইহিস সালাম) হ’তে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত ৩১৫ জন রাসূল সহ এক লক্ষ চবিবশ হাযার পয়গম্বর প্রেরিত হন।*১* বহু নবীর নিকটে আল্লাহ পাক ‘ছহীফা’ বা পুস্তিকা প্রদান করেন এবং প্রত্যেক রাসূলকে দেন পৃথক পৃথক শরী‘আত বা জীবন বিধান। তবে চার জন শ্রেষ্ঠ রাসূলের নিকটে আল্লাহ প্রধান চারটি ‘কিতাব’ প্রদান করেন। যথাক্রমে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপরে ‘তাওরাত’, দাঊদ (আ.)-এর উপরে ‘যবূর’, ঈসা (আ.)-এর উপরে ‘ইনজীল’ এবং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর উপরে ‘কুরআন’। প্রথমোক্ত তিনজন ছিলেন বনু ইস্রাঈলের নবী এবং তাদের নিকটে প্রদত্ত তিনটি কিতাব নাযিল হয়েছিল একত্রিত আকারে। কিন্তু শেষনবী প্রেরিত হয়েছিলেন ‘বিশ্বনবী’ হিসাবে বনু ইসমাঈলে এবং শেষ কিতাব ‘কুরআন’ নাযিল হয়েছিল বিশ্বমানবের জন্য সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উপরে দীর্ঘ ২৩ বছরের বিস্তৃত সময় ধরে মানুষের বাস্তব চাহিদার প্রেক্ষিতে খন্ডাকারে। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন ও শেষ কিতাব ‘কুরআন’ নাযিলের পর বিগত সকল নবুঅত ও সকল কিতাবের হুকুম রহিত হয়ে গেছে। এখন বিশ্বমানবতার পথপ্রদর্শক গ্রন্থ হিসাবে {বাক্বারাহ ২/২, ১৮৫} কেবলমাত্র শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আনীত সর্বশেষ এলাহীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনই বাকী রয়েছে। নিঃসন্দেহে রাসূলের ছহীহ হাদীছ সমূহ আল্লাহর অহী {নাজম ৫৩/৩-৪} এবং কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা {ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৯} ও জীবন মুকুর বৈ কিছুই নয়। যা মুমিন জীবনের চলার পথে ধ্রুবতারার ন্যায় সর্বদা পথ প্রদর্শন করে থাকে {হাশর ৫৯/৭}।

হাদীছে বর্ণিত উপরোক্ত বিরাট সংখ্যক নবীগণের মধ্যে পবিত্র কুরআনে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম এসেছে। তন্মধ্যে একত্রে ১৭ জন নবীর নাম এসেছে সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াতে। বাকী নাম সমূহ এসেছে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে। কেবলমাত্র ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনী সূরা ইউসুফে একত্রে বর্ণিত হয়েছে। বাকী নবীগণের কাহিনী কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে। যেমন মূসা ও ফেরাঊনের ঘটনা কুরআনের ২৭টি সূরায় ৭৫টি স্থানে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলিকে একত্রিত করে কাহিনীর রূপ দেওয়া রীতিমত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা আপনার পূর্বে এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনিয়েছি এবং এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনাইনি...’
{নিসা ৪/১৬৪, মুমিন ৪০/৭৮}।

আমরা বর্তমান আলোচনায় কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত ঘটনা ও বক্তব্য সমূহ একত্রিত করে কাহিনীর রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই সাথে বিশ্বস্ত তাফসীর, হাদীছ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহ থেকেও সামান্য কিছু উদ্ধৃত করেছি। চেষ্টা করেছি নবীদের কাহিনীর নামে প্রচলিত কেচ্ছা-কাহিনী ও ইস্রাঈলী উপকথা সমূহ হ’তে বিরত থাকতে। সীমিত পরিসর ও সীমিত সাধ্যের কারণে অনাকাংখিত ত্রুটি সমূহ থেকে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।


উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে আগত সকল নবীই মূলতঃ চারটি বংশধারা থেকে এসেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম, নূহ, আলে ইব্রাহীম ও আলে ইমরানকে নির্বাচিত করেছেন। যারা একে অপরের বংশধর ছিল ...’
{আলে ইমরান ৩/৩৩-৩৪}। এখানে আলে ইবরাহীম বলতে ইসমাঈল ও ইসহাক এবং আলে ইমরান বলতে মূসা ও তাঁর বংশধরগণকে বুঝানো হয়েছে। ইবরাহীম-পুত্র ইসহাক তনয় ইয়াকূব-এর অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ (অর্থ ‘আল্লাহর দাস’)। তাঁর পুত্র ‘লাভী’ থেকে ইমরান-পুত্র মূসা, দাঊদ ও ঈসা পর্যন্ত সবাই বনু ইস্রাঈলের নবী ছিলেন {আনকাবূত ২৯/২৭}। ইবরাহীমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈলের বংশে জন্মগ্রহণ করেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এজন্য ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা বলা হয়। উল্লেখ্য যে, বিশ্বে মাত্র দু’জন নবীর একাধিক নাম ছিল। তন্মধ্যে ইয়াকূব (আ.)-এর অপর নাম ‘ইস্রাঈল’ এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর অপর নাম ছিল ‘আহমাদ’ {ছফ ৬১/৬} এবং আরও কয়েকটি গুণবাচক নাম। আল্লাহ সকল নবীর উপরে শান্তি বর্ষণ করুন- আমীন!!

নবীদের কাহিনী বর্ণনার উদ্দেশ্য:

প্রশ্ন হ’তে পারে, পবিত্র কুরআনে বিগত নবীগণের ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি সমূহের কাহিনী বর্ণনার উদ্দেশ্য কি? এর জবাব আল্লাহ দিয়েছেন, ‘আমরা পয়গম্বরদের এসব কাহিনী আপনার কাছে বর্ণনা করি, যদ্বারা আমরা আপনার অন্তরকে সুদৃঢ় করি। আর এর মধ্যে এসেছে আপনার নিকটে সত্য, উপদেশ ও স্মরণীয় বস্তু সমূহ বিশ্বাসীদের জন্য’ {হূদ ১১/১২০}। অর্থাৎ এর উদ্দেশ্য হ’ল, যাতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নবুঅতের গুরু দায়িত্ব বহন করার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে যান এবং তাঁর উম্মত এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর নাম:

আদম, নূহ, ইদরীস, হূদ, ছালেহ, ইবরাহীম, লূত্ব, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়াকূব, ইউসুফ, আইয়ূব, শু‘আয়েব, মূসা, হারূণ, ইউনুস, দাঊদ, সুলায়মান, ইলিয়াস, আল-ইয়াসা‘, যুল-কিফ্‌ল, যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা (আ.) ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)। {ইবনু কাছীর, তাফসীর নিসা ২৬৪} এঁদের মধ্যে ইবরাহীম-পূর্ব সকল নবী আদম ও নূহের বংশধর এবং ইবরাহীম-পরবর্তী সকল নবী ও রাসূল ইবরাহীম (আ.)-এর বংশধর। উল্লেখ্য যে, সূরা তওবা ৩০ আয়াতে ওযায়ের-এর নাম, এলেও তিনি নবী ছিলেন না। বরং একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি ছিলেন। কুরতুবী বলেন, অত্যাচারী খৃষ্টান রাজা বুখতানছরের ভয়ে যখন ফিলিস্তীনের ইহুদীরা সবাই তওরাত মাটিতে পুঁতে ফেলে এবং তওরাত ভুলে যায়, তখন ওযায়ের তওরাত মুখস্ত করে সবাইকে শুনান। তাতে অনেকে এটাকে অলৌকিকভাবে তাকে ‘ইবনুল্লাহ’ বা আল্লাহর বেটা বলতে থাকে। ইবনু কাছীর ও সুদ্দী প্রমুখের বরাতে কাছাকাছি একইরূপ বর্ণনা করেছেন। আগামী পর্ব থেকে ধারাবাহিকভাবে আমরা পরপর তাঁদের জীবনী ও তা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরার চেষ্টা পাব ইনশাআল্লাহ।

www.microworkers.com

Assamu alaikuma, www.microworkers.com feed - if you want to work registration and job description, understand and start working. 5 is the best job you can get success otherwise you can try again after a month. Sign up, registration, comment, link back, paragraph / essay writing, and the types of work. Only 9 dollars elartape / manibukarsera able to withdraw money. Google Adsense is the password to the address pheriphai. Password with the site prep \"is to write. I had a credit card, is difficult to make money online income? You can contact us.

\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\

আস্সামু আলাইকুম, মাইক্রওর্য়াকার্স ডট কম-এ কাজ করতে হলে রেজি: করে কাজের বর্ণনা বুঝে কাজ শুরু করুন। ৫টি কাজের সফলতা ভাল হলে কাজ পাবেন নইলে মাসখানেক পরে আবার চেষ্টা করতে পারেন। সাইন আপ, রেজি:, কমেন্ট, ব্যাক লিংক, প্যারাগ্রাফ/রচনা লিখন ইত্যাদি রকমের কাজ থাকে। ৯ ডলার হলেই এলার্টপে/মানিবুকার্সের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন। গুগল এডসেন্সের মতো পাসওর্য়াড দিয়ে ঠিকানা ফেরিফাই করা হয়। সেই পাসওর্য়াড সাইটে দিয়ে প্র“ফ করে নিতে হয়। ক্রেডিট কার্ড নাই বলে, অনলাইনে আয়ের টাকা তুলতে অসুবিধা হচ্ছে? আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

www.minuteworkers.com

The minutes of মাইক্রওয়াকার্সের Workers small - small work consists. There is work not to be bid. To this end it is determined at the time. It\\\'s very easy for a site. If you want to bid, except here you can make a little income. Smoked: simply, a dollar will be credited to your account. If you do not wish to delay the smoked-site.
\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\

মাইক্রওয়াকার্সের মতো মিনিট ওয়ার্কার্স ছোট-ছোট কাজের সমন্বয়ে গঠিত। এখানে কাজ করতে বিড করতে হয় না। নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে হয়। এটি খুবই সহজ একটি সাইট। বিড ছাড়া সহজ অল্প কিছু আয় করতে চাইলে এখানে কাজ করতে পারেন। রেজি: করলেই এক ডলার আপনার একাউন্টে জমা হবে। ইচ্ছা হলে দেরী না করে রেজি: করুন.

Image upload for earn

http://imagetwist.com -Income can be uploaded to the site. The registration of the image upload libitum. You can upload a photo after the link, the link anywhere (blog / web site) share. When you click on the picture that someone, your earnings will be. You will only pay out only $ 1. Moneybukars, Alert Pay - the withdrawal of.

\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\

http://imagetwist.com -সাইট থেকে ছবি আপলোড করে আয় করা। রেজি: করে ছবি ইচ্ছামতো আপলোড করুন। ছবি আপলোডের পরে যে লিঙ্ক পাবেন,সে লিঙ্ক যেকোন স্থানে (ব্লগ/ওয়েব সাইট শেয়ার করুন। আপনার ছবিতে যে কেউ ক্লিক করলে, আপনার আয় হবে। মাত্র ১ ডলার হলেই পে আউট পাবেন। মানিবুকার্স, এলার্ট পে-এর মাধ্যমে টাকা উঠানো যায়।

সৃষ্ঠিকর্তাকে কে সৃষ্ঠি করেছেন? আল্লাহ সম্পর্কে কিছু বিভ্রান্তিকর প্রশ্নে এবং এর উত্তর

১ সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন ?

২ যার কোন কিছুই অসাধ্য নয়, তাকেই বলা হয় মর্বশক্তিমান। আমরা বলি আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাহলে তিনি কি এমন একটা পাথর তৈরী করতে পারবেন, যা নিজেই ভাংতে পারবেন না। যদি তৈরী করতে না পারেন, তাহলে সর্বশক্তিমান কথাটির সঠিক অর্থ রইল না। যদি তৈরী করে ভাংতে না পারেন, তাহলেও সমস্যাটি একই দাঁড়ালো। তাহলে কি সর্বশক্তিমান কখাটি অর্থহীন একটা শব্দ মাত্র?



৩ আল্লাহ পাক যদি সর্বশক্তিমান হন, তাহলে তিনি এমন একটি পাহাড় বানাতে পারবেন, যে পাহাড় তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না। যদি না পারেন, তাহলে তিনি সর্বশক্তিমান নন। যদি পারেন, তাহলেও তিনি সর্বশক্তিমান নন, কারন তিনি আর ঐ পাহাড় তুলতে পারবেন না।


৪ সৃষ্টিকর্তা কি আরেক সৃষ্টি কর্তা সৃষ্টি করতে পারবেন ?


কোন ক্লাস ফাইভের ছেলে মনে হয় এভাবে উত্তর দিবে, হ্যা পারেন, এমন পাথর যা নিজেই ভাংতে পারেন না। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তা ভাংতে পারবেন না, যতেক্ষণ পর্যন্ত তিনি তা না চান। কিন্তু তিনি আবার এটি ভাঙ্গতে পারবেন, যখন তিনি তা চান।


কী ভাই মাথা কি ঘুরাইতাছে। কিন্তু আল্লাহ পাক এসব কাজ করেন তা জানা যায় না। যে কাজ তাকে দিয়ে মানায় না, তা তিনি করেন বলে, আমরা দেখি না। যেমনঃ


আল্লাহ পাক কি ভুল করতে পারেন। হ্যাঁ পারেন, যদি তিনি চান কিন্তু তিনি তা করেন না, আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হন না (২০:৫৩)


আল্লাহ পাক কি কারো প্রাপ্য হক কেরে নিতে পারেন, হ্যা তিনি পারেন কিন্তু তিনি তা করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কারো প্রাপ্য হক বিন্দু-বিসর্গও রাখেন না; (4:40)

{এটা দেখে ভাবিয়েন না, যে আল্লহ পাক কাউকে পরিক্ষা করেন না}

আসল কাহিনীতে আসেন, আমি যখন ছোট ছিলাম, দাবা খেলায় আমি অনেক ভাল ছিলাম (এখন দাবা খেলি না)। তো দাবা খেলায় কে কত কম চালে জিততে পারবে এ নিয়ে চিন্তা করতাম, তো একবার মনে হলে আমি এত এত চালে জিততে পারি, শেষে বের করলাম সর্বনিম্ন এত চালে আমি জিততে পারবো। এর নিচে কোন চালে কেউ জিততে পারবে না। কিন্তু তখনই পড়লাম ঝামেলায়, তাহলে আল্লাহ পাকও কি এক চালে গেইম দিতে পারবেন না? গবেষণা করে উত্তর বের করালাম, হ্যাঁ তিনি পারবেন, যে তার বিরুদ্ধে খেলতে গিয়েছে, সে এক চাল হওয়ার পরই নিজে হার মেনে যাবে নিজ থেকেই তাই হেরে যাবে। কারণ আল্লাহ পাক চান তিনি এক চালে গেইম দিবেন, আর সে এমনিতেই হার মেনে যাবে। ব্যাপারটি বুঝতে বেশ গোলমাল লাগবে। কিন্তু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন। বিষয় হচ্ছে হারা বা জিতা বলতে আসলে কিছু নেই, কিন্তু আমাদের মনে ধারণা এটি হারা, এটি জিতা, এভাবেই আমরা ভাবি। এর বাইরে আমরা কিছু ভাবতে পারি না। আমাদের ভাবার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে অভাবনীয় বিষয়ে প্রশ্ন তুলি। এখন, এই অভাবনীয় বিষয় যদি আল্লাহ পাক করতে চান তাহলে করতে পারেন, কীভাবে, খুব সহজ, তিনি সময়-কে পূর্বে নিয়ে যাবেন, আর পূর্ব থেকেই এভাবে নিয়ে আসবেন। তাহলে তিনি যা নিয়ে আসবেন, আপনি তাই ভাববেন। আর এভাবেই তিনি তাঁর কাজ করে ফেলতে পারেন।


মনে করুন দাবা খেলার নিয়মই তিনি হাজার বছর আগে গিয়ে পরিবর্তন করে দিলেন। এখন, হাজার বছর পরে দেখবেন এক চালেও গেইম হয়। বুঝছেন ব্যাপারটা । যেসব চিন্তা করতেছেন, এগুলো হচ্ছে সেন্স, যা আল্লাহ পাক যেভাবে দিয়ে রাখছেন সেভাবেই করতেছেন, এখন আল্লহ পাক যখন ইচ্ছা এই সেন্স পরিবর্তন করে দিতে পারবেন। তখন বর্তমানে যুক্তিতে যা অসম্ভব বলে বিবেচিত হয়, তা আর তখন অসম্ভব মনে হবে না। কিন্তু তখন হয়ত অন্য প্রশ্ন খুঁজবেন।


না বুঝলে আরেকটু আগাই। কোন ব্যাপার ঘটা বা হওয়া আল্লাহ পাকের নিজের সাথে সম্পর্কিত নয়। মনে করুন, আল্লহ পাক সব করতে পারেন। এই সব করা আসলে কী? আল্লাহ পাকের কিছু হওয়াও নেই, তিনি কিছু হন না, আল্লাহ পাকের ঘটাও নেই, তিনি কিছু ঘটেন না। কিছু হওয়া বা ঘটা এটা সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত, স্রষ্টার সাথে নয়। তিনি সর্বশক্তিমান। এই সর্ব বিষয়টি কী সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। তিনি কোন বস্তু নন, যে তাঁর উৎপত্তি হবে, তিনি কোন মানুষ বা হাতি নন যে তিনি পাথর তুলবেন (জীবনে দেখছেন যে আল্লাহ পাক পাথর তুলতেছেন?) আসলে প্রশ্ন গুলিই ঠিক না। বলা যায় পাগলামি। যেমনঃ- একটি ঘরে মাইনাস দশ জন মানুষ আছে। এ কথার কোন অর্থ নেই, কারণ ঘরে কোন মানুষ নেই হতে পারে, কিন্তু মাইনাস দশজন মানুষ আছে হতে পারে না। কোন কথার কী অর্থ থাকবে, কী থাকবে না, এটিও আল্লাহ পাকের নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি ইচ্ছা করলেই হাজার বছর আগে গিয়ে সৃষ্টির সিস্টেম বদলিয়ে যা আজকে পারা যায় না বলে মনে হচ্ছে, তাই আবার পারা যাবে মনে হবে। এহিয়া উলুম উদ দ্বীন থেকে বুঝার সুবিধার্থে,


একাত্ববাদ আল্লাহ্ এক তার কোন শরীক নেই,তিনি একক তার মত কেউ নাই ,তিনি অমুক্ষাপেক্ষি তার প্রতিদ্বন্দী এবং সমকক্ষ কেউ নাই.তিনি চিরন্তন যার কোন শুরু নেই.তিনি সদা প্রতিস্ঠত ,যার কোন শেষ নাই.দতনি সদা বিদ্যমান,যার কোন অবসান নেই.তিনি অক্ষয় যার কোন ক্ষয় নাই.তিনি সবার প্রথম এবং শেষ.তিনি প্রকাশ্য এবং তিনিই গোপন.


পবিত্রতা এই বিস্বাস রাখা যে, আল্লাহ্ তা’আলা সাকার নন,সীমিত পর্দাথ নন,পরিমান বিশিষ্ট নন এবং বিভাজ্য নন.তিনি দেহের অনুরুপ নন.

তিনি কোন বিদ্যমান বস্তুর অনুরুপ তিনি নন এবং তিনি কোন বিদ্যমান বস্তুও তার মত নয়.
না তার সমতুল্য কেউ আছে না তিনি কারও সমতুল্য.
তিনি আরশ,আকাশ এবং পৃথিবীর সীমানা র্পযন্ত সবকিছুর উপরে.তিনি এই ভাবে উপরে যে আরশের নিকটেও নন,আবার পৃথিবী থেকে দুরেও নন.বরং তার র্মযাদা এই সব নৈকট্য এবং দুরত্বের অনেক উর্ধে.এতদসত্তেও তিনি প্রত্যেক বস্তুর সন্নিকটে এবং মানুসের ধমনির নিকটবর্তী.
তারনৈকট্য দেহের নৈকট্য এর অনুরুপ নয়.যেমন তার সত্তা দেহের সত্তার অনুরুপ নয়.তিনি কোন বস্তুর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে না এবং কোন বস্তু তার মধ্যে অনুপ্রবেশ করে না.তিনি সময়ের বেস্টনির থেকে মুক্ত.তিনি স্থান কাল এবং জন্মের র্পুবে ছিলেন.তিনি এখনও তেমনি আছেন যেমন ছিলেন র্পুবে.তিনি নিজ গুনা বলীতে সৃস্টি থেকে আলাদা.তার সত্তায় তিনি ব্যতিত অন্য কেউ নাই.এবং অন্য কোন কিছুতেই তার সত্তা নেই.তিনি পরির্বতন ও স্থানন্তর থেকে পবিত্র.
তিনি গুনাবলীর র্পূনতায় কোন সংযোজনের প্রয়োজন রাখে না.বিবেক দ্বারাই তার অস্তিত্ব আপনা আপনি জানা হয়ে যায়. আমি চোখ খুলেছি কিন্তু আমি কোন কলম দেখতে পাচ্ছিনা? জ্ঞান তাকে বলল-এটা তুমি কি বলছ?ঘরের আসবাবপত্র কি ঘরের মালিকের ন্যয় হয়?তুমি কি জান স্রস্টার সত্তা অন্য কারো সত্তার মত না ?ঠিক সেরকম স্রস্টার হাত জড় জগতের অন্যান্য হাতের মত না.তার কলম জড় জগতের কলম এর মত না.তার সত্তার কোন শরীর নেই.তিনি কোন অবস্থানে আবদ্ধ নয়.তার হাত মানুষের হাত এর মত রক্ত,মাংস ওঅস্থির দ্বারা হঠিত নয়.তার কলম জড় জগতের কলম এর মত নয়.তার ক‍লমের কোন স্বর বা অক্ষর নেই.তার লেখনিতে কোন কালির অংকন নেই।

আপনাদের বুঝার সুবিধার্তেঃ আল্লাহ পাক যুক্তির বেষ্ঠনী থেকে মুক্ত, কোন যুক্তি তাকে আটকাতে পারেন না, তিনি যেভাবে চান সেভাবেই যুক্তি তৈরি হয়, যেভাবে তিনি চান সেভাবেই বাস্তবতা আসে, তিনি যে কোন সময় বাস্তবতার যুক্তিকে ভিন্ন রূপ এবং ভিন্ন রূপের যুক্তিকে বাস্তবতার যুক্তিতে নিয়ে আসতে পারেন, যা আজকে বাস্তব মনে হচ্ছে তাকে অবাস্তব, এবং যা অবাস্তব মনে হচ্ছে তাকে বাস্তবে পরিণত করতে পারেন। তখন অবাস্তবকেই আপনার নিকট স্বাভাবিক মনে হবে, আর বর্তমানের স্বাভাবিককে অবাস্তব মনে হবে। বস্তুত আল্লাহ পৃথিবীর কোন বস্তুর মত নহেন, যে আপনি ধারণা করবেন তিনি এরূপ, না কোন বস্তুর বৈশিষ্ট্য তাকে দিতে পারবেন, (যেমন তিনি পাথর তুলতে পারবেন কি না? কেউ তাহাকে সৃষ্টি করেছে কি না) আপনাকে বুঝতে হবে, সৃষ্ট এবং স্রষ্টা এর পার্থক্য। আল্লাহ পাক কোন কিছুর মত নন, তাই কোন সৃষ্ট বস্তু বা প্রাণী বা অন্য কিছুর কোনরূপ বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা আল্লাহ পাকের উপর আরোপ করতে পারবেন না। জোর করে আরোপ করতে চাইলে বাক্যের কোন অর্থ থাকে না। আরো ভাল ভাবে বুঝতে এই লেখাটি পড়ুন। আর এসব পড়েও মূলত কিছু বুঝবেন না বা বুঝতে চাইবেন না, কারণ হেদায়েত আল্লাহ পাকের কাছে, তাই শুদ্ধ মনে আল-কুরান পড়ুন, খামোকা আমাদের মত মূর্খদের কথা কেন শুনবেন।


মেরিনার ভাইয়ের একটি সুন্দর যুক্তি আমার পুরো বক্তব্য কে তুলে ধরতে পারে। বক্তব্যটি নিম্নরূপঃ

ধরা যাক আপনি অনেক দীর্ঘ একটি তাসের সারির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনি দেখছেন একটি একটি করে তাস পড়ে যাচেছ এবং পড়ে যাওয়ার সময় সে পরের তাসটিকে ধাক্কা দিচ্ছে, ফলে পরের তাসটিও পড়ে যাচেছ, এভাবে একটি তাসের পতনের কারণ হচ্ছে তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, এভাবে যেতে থাকলে একটি তাসে গিয়ে আপনাকে থামতেই হবে যেটি প্রথম তাস ৷ এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, প্রথম তাসের পতনের কারণ কি? উত্তরে বলা যাবে না যে সেটিও একটি তাস, ফলে বুঝতে হবে যে প্রথম তাসের পতনের কারণ এমন কিছু যে নিজে তাস নয় ৷ হয়ত সে একজন মানুষ যে প্রথম তাসটিকে টোকা দিয়েছে ৷ এই মানুষটি যেহেতু তাস নয়, সেজন্য তাসের ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যসূচক প্রশ্ন করা যাবে, এই মানুষের ক্ষেত্রে তা করা যাবে না ৷ যেমন তাসের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যায় যে “তাসটি কি হরতন না ইস্কাপন?”, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি অবান্তর ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তাসের পতনের পেছনে আদি কারণ হিসেবে মানুষ থাকার বিষয়টি বাস্তব ৷ ঠিক তেমনি স্রষ্টা যেহেতু সৃষ্টি নন কিংবা ফল নন, সেহেতু “তাঁর স্রষ্টা কে?” বা “কারণ কি?” এই প্রশ্নগুলি তাঁর বেলায় প্রযোজ্য নয় – কিন্তু তাঁর থাকার বিষয়টি বাস্তব ।

সবশেষে বলি, আল্লাহ পাক সব বিষয়ে জানেন। আমাদের জানার অনেক ভুল আছে। তিনি আমাদের যেন ক্ষমা করেদেন, আমিন।


কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

১ ইমাম গাজ্জালি রঃ (উনার লেখা পড়ে বিষয় বুঝতে সহজ হয়েছে)
২ ডা জাকির নায়েক (উনার একটি লেখা আমাকে একই বিষয় বুঝতে সহায়তা করেছে)
৩ মেরিনার ভাই (উনার একটি লেখা আমাকে একই বিষয় পরিষ্কার হতে সহায়তা করেছে)
৪ জানা অজানা সকল ব্যাক্তি যারা এই বিষয় গুলিকে পরিষ্কার করে গিয়েছেন। (তাদের কাজের উপর ভিত্তি করেই অন্যরা কাজ করেছে)
৪ এবং সকল ব্যাক্তি যারা এ ধরনের প্রশ্নগুলি তুলেছেন। (তারা প্রশ্ন না করলে, এ ব্যাপারে কেউ চিন্তা করত না)

Source


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'। প্রবন্ধটি পড়া হলে, নিচের লিংক থেকে Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করুন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

সীরাতুন্নবীর মাসে রাসুলুল্লাহ সা: এর জীবনী সম্পর্কিত বেশ কিছু বই ডাউনলোড লিঙ্ক

ইসলামে নারীর যৌন অধিকার (courtesy to quraneralo.com)

লিখেছেনঃ হাফিজ

[লেখাটিতে আমরা যা জানবো-


ইসলামের দৃষ্টিতে নারী কি পুরুষের উপভোগের যৌন মেশিন?


ইসলামে কি পুরুষকে স্ত্রীর ওপর যথেচ্ছ যৌনাচারের ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে?


স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র – কেন এই আয়াত?


ইসলামে কি নারীদের যৌন চাহিদার কোন স্বীকৃতি নেই?


ইসলামে কি যৌন অধিকার একতরফাভাবে পুরুষকে দেওয়া হয়েছে?]




ভূমিকা

ইসলামের সমালোচকরা অনেকে বুঝাতে চান যে ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন মূল্য নাই, বরং এই ব্যাপারে পুরুষকে একতরফা অধিকার দেওয়া হয়েছে, পুরুষ যখন ইচ্ছা তখন যৌন চাহিদা পূরণ করবে আর স্ত্রী সেই চাহিদা পূরণের জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। এই ধারণার পেছনে কুরআন আয়াত এবং হাদিসের অসম্পূর্ণ পাঠের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বস্তুত কুরআনের কিছু আয়াত বা কিছু হাদিস দেখে কোন বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, বরং তা অনেক ক্ষেত্রেই পাঠককে বিভ্রান্ত করতে পারে। কোন বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে হলে সেই সংক্রান্ত কুরআনের সবগুলো আয়াত এবং সবগুলো হাদিসকেসামনে রাখতে হবে। যা হোক, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য শুধু এতটুকু দেখানো ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন স্বীকৃতি আছে কি-না। আসুন চলে যাই মূল আলোচনায়।



পরিচ্ছেদ ১



কেন এই দাবি?


সূরা বাকারার ২২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-


أَنَّىشِئْتُمْنِسَآؤُكُمْحَرْثٌلَّكُمْفَأْتُواْحَرْثَكُمْ


Your wives are a tilth for you, so go to your tilth, when or how you will


তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।


হঠাৎ করে এই আয়াতাংশ কারো সামনে পেশ করা হলে মনে হতে পারে যে এখানে পুরুষকে যখন ইচ্ছা তখন তার স্ত্রীর সাথে যৌনাচার অবাধ অনুমতি দেওয়া হচ্ছে- এমনকি স্ত্রীর সুবিধা-অসুবিধার দিকেও তাকানোর কোন প্রয়োজন যেন নেই। যারা এই ধরণের ধারণার প্রচারণা চালান তারা সাধারণত এই আয়াতটি উল্লেখ করার পর তাদের ধারণার সাপোর্টে কিছু হাদিসও পেশ করেন, যেমন-


কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। (মুসলিম, হাদিসের ইংরেজি অনুবাদ-৩৩৬৬)


উপরিউক্ত আয়াতাংশ এবং এই ধরণের কিছু হাদিস পেশ করে অনেকই এটা প্রমাণ করতে চান ইসলাম কেবল পুরুষের যৌন অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নারীকে যৌন মেশিন হিসেবে যখন তখন ব্যবহারের ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে। সোজা কথায় ইসলামে যৌন অধিকার যেন একতরফাভাবে পুরুষের! আসলেই কি তাই?




পরিচ্ছেদ ২

২.১ কুসংস্কারের মূলোচ্ছেদকারি কুরআনের ২:২২৩ আয়াত সংক্রান্ত বিভ্রান্তির নিরসন

মদিনার ইহুদিদের মধ্যে একটা কুসংস্কার এই ছিল যে, কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে পেছন দিক থেকে যোনিপথে সঙ্গম করত তবে বিশ্বাস করা হতো যে এর ফলে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তানের জন্ম হবে। মদিনার আনসাররা ইসলামপূর্ব যুগে ইহুদিদের দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত ছিল। ফলে আনসারগণও এই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন। মক্কাবাসিদের ভেতর এই কুসংস্কার ছিল না। মক্কার মুহাজিররা হিজরত করে মদিনায় আসার পর, জনৈক মুহাজির যখন তার আনসার স্ত্রীর সাথে পেছন দিক থেকে সঙ্গম করতে গেলেন, তখন এক বিপত্তি দেখা দিল। আনসার স্ত্রী এই পদ্ধতিকে ভুল মনে করে জানিয়ে দিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুমতি ব্যতিত এই কাজ তিনি কিছুতেই করবেন না। ফলে ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছে গেল। এ প্রসঙ্গেই কুরআনের আয়াত (২:২২৩) নাযিল হয়, যেখানে বুঝানো হচ্ছে- সামনে বা পেছনে যেদিক দিয়েই যোনিপথে গমন করা হোক না কেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। শস্যক্ষেত্রে যেদিক দিয়ে বা যেভাবেই গমন করা হোক না কেন তাতে শস্য উত্পাদনে যেমন কোন সমস্যা হয় না, তেমনি স্বামী তার স্ত্রীর যোনিপথে যেদিক দিয়েই গমন করুক না কেন তাতে সন্তান উত্পাদনে কোন সমস্যা হয় না এবং এর সাথে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তান হবার কোন সম্পর্ক নেই
বিস্তারিত তাফসির পড়ে দেখতে পারেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে পায়ুপথে গমন (Anal Sex) করা হারাম। বিস্তারিত এই লিংক
ক্লিক করুন।

কাজেই এই আয়াতের উদ্দেশ্য ইহুদিদের প্রচারিত একটি কুসংস্কারের মূলোত্পাটন, স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার প্রতি লক্ষ না রেখে যখন তখন অবাধ যৌনাচারের অনুমোদন নয়। যারা মনে করেন কুরআনে ইহুদি খৃষ্টানদের কিতাব থেকে ধার করা হয়েছে বা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদি খৃষ্টানদের থেকে শুনে শুনে কুরআন রচনা করেছেন, এই আয়াত তাদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর বটে! প্রকৃত মুক্তচিন্তার অধিকারীদের বরং এই আয়াতের প্রশংসা করার কথা ছিল, কিন্তু প্রশাংসার যোগ্য আয়াতটিকে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।


২.২ ফেরেশতাদের অভিশাপ সংক্রান্ত হাদিসটির বিশ্লেষণ


এবার ফেরেশতাদের অভিশাপ করা সংক্রান্ত ওপরের হাদিসটার কথায় আসি। এই হাদিসটা বুখারিতেও এসেছে আরেকটু পূর্ণরূপে এভাবে:


যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে (যেমন- সঙ্গম করার জন্য), আর সে প্রত্যাখান করে ও তাকে রাগান্বিত অবস্থায় ঘুমাতে বাধ্য করে, ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ করতে থাকে। [বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ভলি- ৪/বুক-৫৪/৪৬০]


একটু ভালো করে লক্ষ্য করুন,


স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ায় স্বামী রাগান্বিত হয়ে কী করছে?


স্ত্রীর ওপর জোর-জবরদস্তি করে নিজের যৌন অধিকার আদায় করে নিচ্ছে?


নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে?


এই হাদিসে নারী কর্তৃক স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ার কারণে স্ত্রীর সমালোচনা করা হলেও পুরুষকে কিন্তু জোর-জবরদস্তি করে নিজ অধিকার আদায়ে উত্সাহিত করা হচ্ছে না। আবার স্ত্রী যদি অসুস্থতা বা অন্য কোন সঙ্গত ওজরের কারণে যৌনাচার হতে বিরত থাকতে চান, তবে তিনি কিছুতেই এই সমালোচনার যোগ্য হবেন না, কেননা ইসলামের একটি সর্বস্বীকৃত নীতি হচ্ছে:


আল্লাহপাক কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।


আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না [২:২৮৬]


আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন করি না। [২৩:৬২]


২.৩ ইসলাম কি শুধু নারীকেই সতর্ক করেছে?


এটা ঠিক যে ইসলাম স্ত্রীদেরকে স্বামীর যৌন চাহিদার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে, কিন্তু স্বামীকে নিজ চাহিদা আদায়ের ব্যাপারে উগ্র হবার কোন অনুমতি যেমন দেয়নি তেমনি স্বামীকেও স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি যত্মবান হবার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম স্ত্রীকে বলেছে যদি রান্নরত অবস্থায়ও স্বামী যৌন প্রয়োজনে ডাকে তবে সে যেন সাড়া দেয়, অন্য দিকে পুরুষকে বলেছে সে যেন তার স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করে, স্ত্রীর কাছে ভালো সাব্যস্ত না হলে সে কিছুতেই পূর্ণ ঈমানদার বা ভালো লোক হতে পারবে না। এই কথা জানার পরও কোন পুরুষ কি স্ত্রীর সুবিধার প্রতি কোনরূপ লক্ষ না রেখেই যখন তখন তাকে যৌন প্রয়োজনে ডাকবে? ইসলাম পুরুষকে এব্যাপারেও সাবধান করে দিয়েছে যে নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে স্ত্রীর যৌন চাহিদার কথাকে সে যেন ভুলে না যায়। অনেকে হয়ত ভাবছেন, কী সব কথা বলছি, কোথায় আছে এসব?


চলুন সামনে এগিয়ে দেখি।




পরিচ্ছেদ ৩



৩.১ ইসলামে স্ত্রীর সাথে সদাচরণের গুরুত্ব


নিচের হাদিসগুলো একটু ভালো করে লক্ষ করুন:


হাদিস-১


আবুহুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার-আচরণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে তারাই উত্তম যারা আচার-আচরণে তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। [তিরমিযি, হাদিস নং ১০৭৯]


হাদিস-২


আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত:


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুমিন মু’মিনা(স্ত্রী)র প্রতি বিদ্বেষ রাখবে না। যদি তার একটি অভ্যাস অপছন্দনীয় হয় তবে আরেকটি অভ্যাস তো পছন্দনীয় হবে। [মুসলিম হাদিস নং- ১৪৬৯, ২৬৭২]


হাদিস-৩


আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত:


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি যার আচার-আচরণ উত্তম এবং নিজ পরিবারের জন্য অনুগ্রহশীল। [তিরমিযি, হাদিস নং- ২৫৫৫]




৩.১.১ তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে:


৩.১.১.১ মু’মিন পুরুষ তার মু’মিনা স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ রাখতে পারবে না।


৩.১.১.২ সদাচারী এবং স্ত্রী-পরিবারের প্রতি কোমল, নম্র, অনুগ্রহশীল হওয়া ঈমানের পূর্ণতার শর্ত।


৩.১.১.৩ কোন পুরুষ যদি উত্তম হতে চায় তাকে অবশ্যই তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে হবে।


একজন মুসলিমের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটা হচ্ছে তার ঈমান- যে ঈমানের জন্য সে নিজের প্রাণ বিসর্জন করতেও কুন্ঠিত হয় না- সেই ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য স্ত্রীর সাথে সদাচারী, নমনীয় এবং অনুগ্রহশীল হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কোন মুসলিম উত্তম বলে বিবেচিত হতেই পারবে না যদি না স্ত্রীর সাথে তার আচার-আচরণ উত্তম হয়।


৩.১.২ এখন প্রশ্ন হলো-


৩.১.২.১ যে স্বামী তার স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি কোন লক্ষ্য রাখে না, সে কি তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে?


৩.১.২.২ অথবা যে স্বামী তার স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য না রেখে যখন তখন তার স্ত্রীর সাথে যৌনকার্যে লিপ্ত হয় সে কি তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে?


৩.১.৩ উত্তর হচ্ছে, পারে না। একজন ভালো মুসলিম যেমন স্ত্রীর জৈবিক চাহিদার প্রতি যত্নবান হবে, তেমনি নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টিও করবে না যা তার স্ত্রীর জন্য কষ্টকর হয়। স্ত্রীর প্রতি অসদাচরণ করে কেউ তার স্ত্রীর কাছে ভালো হতে পারে না আর পরিপূর্ণ মু’মিনও হতে পারে না।


৩.২ ইসলামে স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি গুরত্ব


ইসলাম নারীর যৌন অধিকারকে শুধু স্বীকৃতিই দেয় না বরং এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতন নিচের হাদিসটি তার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ।


আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত:


নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন সে যেন পরিপূর্ণভাবে (সহবাস) করে। আর তার যখন চাহিদা পূরণ হয়ে যায় (শুক্রস্খলন হয়) অথচ স্ত্রীর চাহিদা অপূর্ণ থাকে, তখন সে যেন তাড়াহুড়া না করে। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-১০৪৬৮]


কী বলা হচ্ছে এখানে? সহবাসকালে পুরুষ তার নিজের যৌন চাহিদা পুরো হওয়া মাত্রই যেন উঠে না যায়, স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ হওয়া পর্যন্ত যেন বিলম্ব করে। এরকম একটা হাদিস চোখ দিয়ে দেখার পরও কারো জন্য এমন দাবি করা কি ঠিক হবে যে ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন স্বীকৃতি নেই!


এসব তো গেল উপদেশ। কিন্তু বাস্তবে কেউ যদি এসব উপদেশ অনুসরণ না করে তাহলে এই ধরণের পুরুষদের সতর্ক করা তার অভিভাবক এবং বন্ধুদের যেমন দায়িত্ব তেমনিস্ত্রীরাও তাদের স্বামিদের বিরূদ্ধে ইসলামি রাষ্ট্রের কাছে নালিশ করার অধিকার রাখে। এধরণের কিছু ঘটনা পরিচ্ছেদ চারে আসছে।


এছাড়া সঙ্গমকালে স্ত্রীকে যৌনভাবে উত্তেজিত না করে সঙ্গম করাকে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা তাতে স্বামীর চাহিদা পূরণ হলেও স্ত্রীর চাহিদা পূরণ হয় না এবং স্ত্রীর জন্য তা কষ্টকর হয়। পরিচ্ছেদ পাঁচে এই ব্যাপারে আলোকপাত করা হবে।




পরিচ্ছেদ ৪

এই পরিচ্ছেদে আমরা কিছু দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো যেখানে স্ত্রীর যৌন অধিকারের প্রতি অবহেলা করার কারণে স্বামীকে সতর্ক করা হয়েছে, এমনকি স্বামীর বিরূদ্ধে ইসলামি শাসকের কাছে নালিশ পর্যন্ত করা হয়েছে।

দৃষ্টান্ত-১


আবু মুসা আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত:


হযরত ওসমান ইবনে মাযউন (রা.) এর স্ত্রী মলিন বদন এবং পুরাতন কাপড়ে নবী করিম (সা.) এর বিবিদের কাছে এলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার এই অবস্থা কেন? কুরাইশদের মাঝে তোমার স্বামী থেকে ধনী কেউ নেই। তিনি বললেন, এতে আমাদের কি হবে? কেননা আমার স্বামীর রাত নামাযে কাটে ও দিন রোযায় কাটে। তারপর নবী করিম (সা.)প্রবেশ করলেন। তখন নবীজীর স্ত্রীগণ বিষয়টি তাকে বললেন। অত:পর হযরত ওসমান ইবনে মাযউন (রা.) এর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি তাকে বললেন,-“আমার মধ্যে কি তোমার জন্য কোন আদর্শ নাই?”হযরত ওসমান (রা.) বললেন, কী বলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ? আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত! তখন তিনি বললেন-“তবে কি তোমার রাত নামাযে আর দিন রোযায় কাটে না? অথচ তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, আর তোমার উপর তোমার শরীরেও হক রয়েছে, তুমি নামাযও পড়বে, আবার ঘুমাবেও, আর রোযাও রাখবে আবার ভাঙ্গবেও”। তিনি বললেন তারপর আরেকদিন তার স্ত্রী পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিত অবস্থায় এলেন যেন নববধু। [মাজমায়ে জাওয়ায়েদ, হাদিস নং ৭৬১২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৩১৬]


দৃষ্টান্ত-২:


আবু জুহাইফা (রা.) বলেন:


নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালমান (রা.) এবং আবু দারদা (রা.) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেছিলেন। সালমান (রা.) আবু দারদা (রা.) এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলেন আর উম্মে দারদা (রা.) [আবু দারদা (রা.)এর স্ত্রী]-কে ময়লা কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখতে পেলেন এবং তাকে তার ঐ অবস্থার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, “আপনার ভাই আবু দারদার দুনিয়ার চাহিদা নাই”। এর মধ্যে আবু দারদা এলেন এবং তার (সালমানের) জন্য খাবার তৈরি করলেন আর বললেন, “খাবার গ্রহণ করো কারণ আমি রোযা আছি”। সালমান(রা.) বললেন, “তুমি না খেলে আমি খাচ্ছি না”। কাজেই আবু দারদা(রা.) খেলেন। যখন রাত হলো, আবু দারদা (রা.) উঠে পড়লেন (রাতের নামায পড়ার জন্য)। সালমান (রা.) বললেন, “ঘুমাও”; তিনি ঘুমালেন। পুনরায় আবু দারদা উঠলেন (নামাযের জন্য), আর সালমান (রা.) বললেন, “ঘুমাও”। রাতের শেষ দিকে সালমান (রা.) তাকে বললেন, “এখন ওঠো (নামাযের জন্য)”। কাজেই তারা উভয়ে নামায পড়লেন এবং সালমান (রা.) আবু দারদা (রা.)কে বললেন, “তোমার ওপর তোমার রবের হক রয়েছে; তোমার ওপরে তোমার আত্মার হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে; কাজেই প্রত্যেককে তার প্রাপ্য হক প্রদান করা উচিত”। পরে আবু দারদা (রা.) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাত করলেন এবং একথা তার কাছে উল্লেখ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “সালমান সত্য বলেছে।” [বুখারি, হাদিস নং -১৮৬৭]


দৃষ্টান্ত-৩:


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আমার পিতা একজন কুরাইশি মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। উক্ত মেয়ে আমার ঘরে আসল। আমি নামায রোযা ইত্যাদি এবাদতের প্রতি আমার বিশেষ আসক্তির দরুণ তার প্রতি কোন প্রকার মনোযোগ দিলাম না। একদিন আমার পিতা- আমর ইবনে আস (রা.) তার পুত্রবধুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামীকে কেমন পেয়েছ? সে জবাব দিল, খুবই ভালো লোক অথবা বললো খুবই ভালো স্বামী। সে আমার মনের কোন খোঁজ নেয় না এবং আমার বিছানার কাছেও আসে না। এটা শুনে তিনি আমাকে খুবই গালাগাল দিলেন ও কঠোর কথা বললেন এবং বললেন, আমি তোমাকে একজন কুরাইশি উচ্চ বংশীয়া মেয়ে বিয়ে করিয়েছি আর তুমি তাকে এরূপ ঝুলিয়ে রাখলে? তিনি নবী করিম (সা.) এর কাছে গিয়ে আমার বিরূদ্ধে নালিশ করলেন। তিনি আমাকে ডাকালেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি দিনভর রোযা রাখ? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি রাতভর নামায পড়? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, কিন্তু আমি রোযা রাখি ও রোযা ছাড়ি, নামায পড়ি ও ঘুমাই, স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নতের প্রতি আগ্রহ রাখে না সে আমার দলভুক্ত না। [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ৬৪৪১]


দৃষ্টান্ত-৪:


কাতাদাহ (রহ.) বলেন, একজন মহিলা উমর (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমার স্বামী রাতভর নামায পড়েন এবং দিনভর রোযা রাখেন। তিনি বললেন, তবে কি তুমি বলতে চাও যে, আমি তাকে রাতে নামায পড়তে ও দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করি? মহিলাটি চলে গেলেন। তারপর আবার এসে পূর্বের ন্যায় বললেন। তিনিও পূর্বের মতো উত্তর দিলেন। কা’ব বিন সূর (রহ.) বললেন, আমিরুল মু’মিনিন, তার হক রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কীরূপ হক? কা’ব (রহ.) বললেন, কা’ব (রহ.) বললেন, আল্লাহ তাআলা তার জন্য চার বিবাহ হালাল করেছেন। সুতরাং তাকে চারজনের একজন হিসেব করে প্রত্যেক চার রাতের এক রাত তার জন্য নির্ধারিত করে দিন। আর প্রত্যেক চার দিনের একদিন তাকে দান করুন। উমর(রা.) তার স্বামীকে ডেকে বলে দিলেন যে, প্রতি চার রাতের একরাত তার কাছে যাপন করবে এবং প্রতি চারদিনের একদিন রোযা পরিত্যাগ করবে। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং: ১২৫৮৮]




পরিচ্ছেদ ৫

ইসলামে শৃঙ্গারের গুরুত্ব

ইসলাম সঙ্গমের পূর্বে স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি বা শৃঙ্গার করার প্রতি যথেষ্ঠ গুরুত্ব আরোপ করে। স্ত্রীর যৌনাঙ্গকে সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত না করেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়াকে- যা স্ত্রীর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর- ইসলামে ‘পশুর ন্যায় সঙ্গম করা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং সঙ্গমের আগে শৃঙ্গার এবং আবেগপূর্ণ চুম্বন করাকে সুন্নাতে মু্‌ওয়াক্কাদাহ বলা হয়েছে। এই পরিচ্ছদে জনৈক মহিলা প্রশ্নের প্রেক্ষিতে দারুল-ইফতা, Leicester, UK থেকে প্রদানকৃত একটি ফতোয়ার অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করবো যাতে ইসলামে শৃঙ্গারের গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে:


ইমাম দাইলামি(রহ.) আনাস বিন মালিক(রা.) এর বরাতে একটি হাদিস লিপিবদ্ধ করেছেন যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “কেউ যেন পশুর মতো তার স্ত্রী হতে নিজের যৌন চাহিদাকে পূরণ না করে, বরং তাদের মধ্যে চুম্বন এবং কথাবার্তার দ্বারা শৃঙ্গার হওয়া উচিত।” (দাইলামি’র মুসনাদ আল-ফিরদাউস, ২/৫৫)


ইমাম ইবনুল কাউয়্যিম(রহ.) তাঁর বিখ্যাত ‘তিব্বে নববী’তে উল্লেখ করেছেন যে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৃঙ্গার করার আগে সঙ্গম করতে নিষেধ করেছেন।(দেখুন: ‘তিব্বে নববী’, ১৮৩, জাবির বিন আবদুল্লাহ হতে)


আল্লামা আল-মুনাবি(রহ.) বলেন:


“সঙ্গমের আগে শৃঙ্গার এবং আবেগপূর্ণ চুম্বন করা সুন্নাতে মু্‌ওয়াক্কাদাহ এবং এর অন্যথা করা মাকরূহ।” (ফাইজ আল-ক্বাদির, ৫/১১৫, দ্রষ্টব্য: হাদিস নং ৬৫৩৬) [সূত্র]




শেষের কথা:


শুরুতেই বলেছিলাম, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য শুধু এতটুকু দেখানো ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন স্বীকৃতি আছে কি-না। কাজেই ইচ্ছা করেই কুরআন এবং হাদিসের উল্লেখযোগ্য অনেক কিছুই এখানে যোগ করি নাই। কিন্তু যতটুকু উল্লেখ করেছি তা জানবার পরও ‘ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন মূল্য নেই’, ‘ইসলামে পুরুষকে স্ত্রীর ওপর যথেচ্ছ যৌনাচারের ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে’, ‘ইসলামে যৌন অধিকার একতরফাভাবে পুরুষকে দেওয়া হয়েছে’ এই জাতীয় অভিযোগ সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ আশা করি করবেন না।

COUNTER W