Saturday, February 11, 2012

জয়ের জন্য মরিয়া ভারত ও অস্ট্রেলিয়া


ক্রীড়া ডেস্ক
কমনওয়েলথ ব্যাংক ত্রিদেশীয় সীমিত ওভারের সিরিজে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া যে নাটকীয় জয় পেলেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাতে তাদের মানসিক দৃঢ়তা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাঙ্গারুদের পক্ষে যে অনেক কিছু করা সম্ভব সেটাই প্রমাণিত হলো। ক্রিকেটে তারা শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। আজ রোববার অ্যাডিলেডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অসিরা মোকাবেলা করবে ভারতকে। কমনওয়েলথ ব্যাংক সিরিজের প্রথম রাউন্ড শেষ। আজ থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় রাউন্ড। অসিরা প্রথম রাউন্ডে ২ ম্যাচে জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। ভারত ২ ম্যাচের ১টি জিতেছে। তাদের পয়েন্ট ৪।
অসিরা এ ম্যাচেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করতে চায়। তবে তারা তরুণদের ওপরেই বেশি নির্ভর করবে। কুইন্সল্যান্ডের পিটার ফরেস্ট অথবা ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মিশেল মার্শকে নেয়া হতে পারে। দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাইক হাসিকে বাদ দেয়া হয়েছে। পেসার জেন হিলফেনহাসও বাদ পড়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বলেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে আমরা খুব বেশি ভালো খেলিনি। বলা যায় সৌভাগ্যক্রমে জিতে গেছি। ব্যাটিং ভালো হয়নি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে না হয় সেদিকে জোর দেন তিনি। টপঅর্ডার থেকে শুরু করে মিডলঅর্ডার প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি রান প্রত্যাশা করেন। সীমিত ওভারের ম্যাচে ২৮০-৩০০ রান না হলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া যায় না। অস্ট্রেলিয়া একজন ব্যাটসম্যানকে নিয়েই বেশি চিন্তা করছে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং নিজেকে এখনো মেলে ধরতে পারেননি। তার কাছ থেকেই সবার প্রত্যাশা বেশি। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নারকেও জ্বলে উঠতে হবে। ক্যাঙ্গারুরা এ ম্যাচ জয়ে শতভাগ আশাবাদী। তারা বেশ উৎফুল্ল মেজাজেই রয়েছে।
ভারতের দুঃস্বপ্ন যেন কাটছেই না। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজেদের এখনো মেলে ধরতে পারছেন যেন ইনব্লু খ্যাত ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনি বাহিনী ১ ম্যাচ জিতলেও খুব যে স্বাচ্ছন্দ্যে আছে তা নয়। উপরন' দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়েও দ্বন্দ্ব ও সঙ্কটে রয়েছে। তারা কি আজকের ম্যাচে দুুইজন স্পিনার নাকি দুইজন মিয়িাম পেসার নিয়ে খেলাবে তা নিয়েই ভাবছে।
লেগ স্পিনার রাহুল শর্মাকে দলে রাখা হলেও তাকে চূড়ান্ত একাদশে রাখা হবে কি না তা নিশ্চিত নয়। ফিটনেস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে তাকে। দলে এই মুহূর্তে ভরসা অফস্পিনার রবিন্দ্র আশ্বিন। পেস আক্রমণে জহির খান অথবা বিনয় কুমার- যে কোনো একজন সুযোগ পেতে পারেন।
ভারতের ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও চিন্তা রয়েছে। শেওয়াগ, গম্ভীর, শচিন, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা- এ পাঁচ ব্যাটসমানকে সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শন করতেই হবে। ভারতকে একেবারে শুরুতেই নান্দনিক সূচনা করতে হবে। ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলতে হবে। এ তো গেল খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা। ম্যাচ হবে কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কারণ প্রকৃতির বিরূপ আচরণ। অ্যাডিলেডে গত দুই দিন বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওযা বেশ ঠাণ্ডা। আশা করা যাচ্ছে আজ সুষ্ঠু ও সুন্দর মতোই ম্যাচ হবে। সূত্র : ক্রিকেট ডটকম।
সাকিবের কাছে হার মাশরাফির ঢাকার

সাকিবের কাছে হার মাশরাফির ঢাকার

রুহুল আমিন
মাশরাফি বনাম সাকিব। ঢাকা ও খুলনার মুখোমুখি লড়াইয়ের মাঝে তাদের দুইজনেরও অঘোষিত একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস তো ছিলই! তারা দুইজনই যে জাতীয় দলের সাবেক দলনায়ক। নেতৃত্বগুণের ইস্যুতে তারা কেউই কম যান না। তবে বরাবরই ভাগ্যটা খেয়ালি আচরণ করেছে নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফির সাথে। বিপরীতে নেতৃত্ব তো সোনায় সোহাগা সাকিবের জন্য। গতকাল মিরপুরে যেন এরই আরেকটি পুনঃমঞ্চায়ন দেখাল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার টি-২০ (বিপিএলে) লিগের ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের মধ্যকার লড়াইয়ে। তাতে মাশরাফির দলকে ১৯ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্টে পথচলা শুরু হয়েছে সাকিবের দলের।
যথারিতি বিপিএলের টানা তৃতীয় ম্যাচের নায়ক একজন ক্যারিবিয়ান। গেইল ও ব্রাভোর পর খুলনার ভক্তদের মাতোয়ারা করলেন আন্দ্রে রাসেল। ব্যাট হাতে অপরাজিত ৩৭ রান মাত্র ১৫ বলে। পরে বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে ঢাকার মূল সর্বনাশ করেছেন তিনিই। খুলনার করা ১৭৫ চেজ করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৫৬ রান তুলতে পারেনি ঢাকা। মাঠে এ দিনও সাকিব ছিলেন সর্বেসর্বা। তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং চেঞ্জেই সম্ভাবনা জাগিয়েও ব্যাকফুটে যেতে বাধ্য হয়েছে গ্ল্যাডিয়েটর্স। অন্য দিকে এই দক্ষতার অভাবই বেশি ভুগিয়েছে মাশরাফিকে। যদিও সব কৃতিত্ব খুলনার ব্যাটসম্যানদেরই দিয়েছেন তিনি।
ম্যাচশেষে বোলিং চেঞ্জের ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, ‘আসলে খুলনার ব্যাটসম্যানেরা দারুণ খেলেছেন। বোলারদের দোষ দিয়ে লাভ কী? সব কৃতিত্ব তাদের ব্যাটসম্যানদের।’ দক্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি খুলনার চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহে অবদান তো আর কম নয় সাকিবের। বিপর্যয়ের মুখে খেলেছেন সর্বোচ্চ ৪২ রানে ইনিংস। ৩১ বলে তিন চার ও এক ছয়ে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য মাশরাফির দলকে করতে হতো ২৫ রান। টি-২০ ক্রিকেটে এটা অসম্ভব কোনো টার্গেট নয়। আর পোলার্ডের মতো ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকলে তো কথাই নেই। বোলারের নার্ভ শক্ত রাখা মস্ত দায়! তবে সাকিব ঠিকই শেষ ওভারটা জমা রাখেন ওই রাসেলের জন্য। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। প্রথম বলে বোল্ড নাভিদ। দ্বিতীয় বল মাশরাফি তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন গিবসের হাতে। পরের দুই বল ডট হলে নিশ্চিত হয়ে যায় খুলনার জয়। যে কারণে পঞ্চম বলে পোলার্ডের চারের মারটা মোটেও উন্মাদনা দেয়নি ঢাকার ভক্তদের। শেষ বলটা লেগের দিকে ঘুরিয়েও রান নেয়ার কোনো তাড়না দেখা যায়নি ক্রিজে থাকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। ততক্ষণে জয়ের আনন্দ ভাগে ব্যস্ত হয়েছেন খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের ক্রিকেটারেরা। ৩২ বলে ৫ চারে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন পোলার্ড। এ ছাড়া ১৬ বলে ২৮ রান করেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার আজহার মেহমুদ। ৩৫ রানে ৪ উইকেট নেন রাসেল।
ব্যাট হাতে ছোটখাটো একটা ঝড় তোলার পর ফিল্ডিংয়ে তো কারিশমাই দেখালেন টাইগার ক্রিকেটের নতুন ক্রেজ নাসির হোসেন। পঞ্চম উইকেটে পোলার্ড ও স্টিভেন্সের ৫৮ রানের জুটিটা তো তারই দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ভাঙতে পেরেছে খুলনা। গ্ল্যাডিয়েটর্সের এই দুই ব্যাটসম্যান তো চিন্তার ভাঁজ ফেলেন সাকিবের কপালে। ব্যক্তিগত ৩৮ রানে নাসিরের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে রান আউটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন স্টিভেন্স। নিজের প্রথম ওভারেও ২ উইকেট নেন রাসেল। আজহার মেহমুদের পর একই ওভারে আরেকটি ব্যর্থতার নজির গড়ে আশরাফুল ফিরে যান সাজঘরে। ৪ বল মোকাবেলায় ৯ রান করেন জাতীয় দলের সাবেক এই দলনায়ক।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা ৩৯ রানে ২ উইকেট পতনের পর দলীয় ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন সাকিব ও ডোয়াইন স্মিথ। বিছিন্ন হওয়ার আগে দলীয় ভাণ্ডারে যোগ করেন ৭১ রান, ৫১ বল মোকাবেলায়। ইনিংসের ৭৫ বলে শতরানে পৌঁছে খুলনা, ৯ চার ও তিন ছক্কায়। ব্যক্তিগত ৩৭ রানে স্মিথ ফিরে গেলে সাকিবও বেশি দূর যেতে পারেননি। অবশ্য ততক্ষণে একটা ভিতে দাঁড়িয়ে গেছে খুলনার সংগ্রহ। আর তখনো তো দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিকানো নাসির ছিলেনই। কেন যে তার দাম বেশি উঠেছিল,তাই-ই প্রমাণে মরিয়া হন রংপুরের এই তরুণ। যদিও খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং মার্কে পৌঁছানোর আসল কাজটা সারেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার রাসেল। তিনটি বিশাল ছক্কার সাথে চার হাঁকান দু’টি। কম যাননি অন্য প্রান্তের নাসিরও। এক ছক্কা ও দুই চারে ১২ বলে ২২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তিনি। খুলনাও পৌঁছে ৫ উইকেটে ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং মার্কে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : খুলনা রয়েল বেঙ্গলস
খুলনা ইনিংস : ১৭৫/৫ (২০ ওভার); সাকিব ৪২, স্মিথ ৩৭, রাসেল ৩৭ অপ:, নাসির ২২ অপ:; মাহমুদ ২/২০।
ঢাকা ইনিংস : ১৫৬/৭ (২০ ওভার); পোলার্ড ৩৯ অপ:, স্টিভেন্স ৩৮, মাহমুদ ২৮; রাসেল ৪/৩৫।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আন্দ্রে রাসেল (খুলনা রয়েল বেঙ্গলস)। ফল : খুলনা ১৯ রানে জয়ী।
text

COUNTER W