Friday, March 9, 2012

-----পথ পরিচিতি--------------------- পর্ব ১

সত্য পথের পথিকগণই কেবল নির্ভুল গন্তব্যে পৌছাতে সক্ষম। এই পথেই লাভ হয় সর্বোচ্চ সম্পদ ‘আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি’।
এই পথ ইসলামের পথ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এই পথের পরিচিতি বিস্তারিতভাবে তাঁর তেইশ বছরের পয়গম্বরী জীবনে বর্ননা করে গিয়েছেন।
তিনি অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সর্বকালের মানুষের নবী। নবীদের নবী। জিন ফেরেশতা সমস্ত মাখলুকের নবী।
তিনি আল্লাহ্‌পাকের হাবীব-প্রেমাষ্পদ। তাঁর অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবী। তাঁর প্রবর্তিত পথ ব্যতিরেকে আল্লাহ্‌ প্রাপ্তির আর কোন পথ নেই। ঐ ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী, যিনি তাঁর সফল অনুসরণের সাধনায় আমৃত্যু নিয়োজিত রয়েছেন।
ইসলাম পূর্ন দ্বীন----পূর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এই পূর্নতা এমনই যে, তাঁর মধ্যে সংযোজন ও বিয়োজনের অবকাশ নেই। এই দ্বীন পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং পরিবর্জনের প্রয়োজন থেকে মুক্তও। হযরত আদম (আঃ) এর মাধ্যমে যে দ্বীনের বীজ বপন করা হয়েছিল, সেই দ্বীনই বিভিন্ন নবীগণের মাধ্যমে কালক্রমে পত্র-পুষ্পে পল্লবিত হয়ে পূর্নতা প্রাপ্ত হয়েছে মহানবী (সঃ) এর নিকটে এসে। আল্লাহ্‌পাক সঃ কথাই এরশাদ করেছেন এভাবে, ‘আজকে আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম’।
এই দ্বীন আমাদের জীবনে পূর্নরূপে প্রতিফলিত করাই আমাদের প্রধান কর্তব্যকর্ম। আল্লাহ্‌পাকের হুকুমও এই রকম। তাই এরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পূর্নরূপে ইসলামে দাখিল হয়ে যাও’।
মহানবী (সঃ) তাঁর অন্তিম ভাষণে জানিয়ে দিয়েছেন, আমার পরে তোমরা দুটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে- তবেই তোমরা ভ্রষ্টতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। সে দুটি জিনিস হচ্ছে, কোরআন ও হাদিস।
আল কোরআন এবং আল হাদিসের মধ্যেই আমাদেরকে পূর্ন দ্বীনের স্বরূপ তালাশ করতে হবে। এর বাইরে আমাদের চিন্তা চেতনাকে পরিচালিত করার কোনই অবকাশ নেই। আবার কোরআন হাদিসের ঐরূপ অর্থই গ্রহণ করতে হবে, যেরূপ অর্থ উদ্ধার করেছেন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সম্মানিত ইমামগণ। কারন শিয়া, মোতালিজা, খারেজী, কাদিয়ানী, মওদুদী প্রভৃতি পথভ্রষ্ট দলও কোরআন ও হাদিস থেকেই দলিল প্রমাণাদি পেশ করে থাকে। তাঁদের প্রদত্ত কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা প্রবৃত্তিপ্রসূত এবং সত্যবিচ্যুত। একমাত্র আহ্‌লে সুন্নত ওয়াল জামাতের আলেমগণই কোরআন হাদিসের সঠিক অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের শিক্ষাধারা সম্মানিত সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এবং সলফে সালেহীনের অনুসরণের দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল। এই জামাতই আল্লাহ্‌পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের পথের পথিকৃৎ। এই জামাতই নাজাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের জামাত।
তাই প্রতিটি মুসলমানের জন্য প্রথম ফরজ কাজ, এই জামাতের আকিদা বিশ্বাস অনুযায়ী নিজেদের আকিদা বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা।
আকিদা বিশ্বাস বিষয়ক সংক্ষিপ্ত বিবরণ এরকমঃ
১। আল্লাহ্‌পাকই অস্তিত্বও। আর যাবতীয় বস্তুকে আল্লাহ্‌পাকই অস্তিত্ব প্রদান করেছেন।
২। আল্লাহ্‌পাকের জাত (অস্তিত্ব) এক, সেফাত (গুণাবলী) এক এবং আফআলও (কার্যাবলী) এক। কোন ব্যাপারেই তাঁর সংগে কারও কোন শেরকত (অংশ) নেই।
৩। আল্লাহ্‌পাকের জাতের মতো তাঁর সেফাত এবং আফআলও বেমেছাল (আনুরূপ্যবিহীন)। যেমন—এলেম (জ্ঞান) সেফাত—এই গুন আদিঅন্তবিহীন, অবিভাজ্য এবং আনুরূপ্যবিহীন। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার জ্ঞাতব্য বিষয় এলেম সেফাত কর্তৃক বিকশিত হয়েছে। আল্লাহ্‌তায়ালা সমস্ত বস্তুকে তাঁদের অনুকূল প্রতিকূল অবস্থায় আংশিক ও সমষ্টিগতভাবে প্রত্যকের বিশিষ্ট সময় সহ এক অবিভাজ্য মুহূর্তেই জেনেছেন। আল্লাহ্‌পাকের এলেম খন্ড-বিখন্ড হওয়া এবং অন্য কারো মতো হওয়া থেকে পবিত্রও। আল্লাহ্‌পাকের অন্যান্য সেফাতকেও এইরূপ ধারনা করতে হবে।
যেমন কালাম (বাক্য) সেফাত। এই সেফাতও অবিভাজ্য, অতুলনীয় এবং এক। আল্লাহ্‌পাক আদি থকে অন্ত পর্যন্ত ঐ একটি বাক্য দ্বারাই বক্তা। আদেশ, নিষেধ, বিজ্ঞপ্তি অথবা যে কোন বিষয়ের বর্ননাই হোক না কেন, তা ঐ বাক্য থেকে উৎসারিত। তওরাত, ইঞ্জিল, যবুর অথবা কোরআন---সবই ঐ এক কালাম (বাক্য) সেফাত থেকে এসেছে। আল্লাহ্‌তায়ালার অন্যান্য সেফাতও তাঁর জাতের মতোই এক, অবিভাজ্য এবং তুলনাবিহীন।
এরকম আল্লাহ্‌পাকের আফআলও (কার্যকলাপও) এক, অবিভাজ্য এবং আনুরূপ্যবিহীন। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় কার্যকলাপ (সৃষ্টি, ধ্বংস, জীবন, মৃত্যু, উত্থান, পতন ইত্যাদি) ঐ এক ও অতুলনীয় কার্যেরই বিকাশ।
৪। আল্লাহ্‌তায়ালা কোন বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করেন না এবং কোন বস্তুও তাঁর মধ্যে প্রবেশ করে না। তিনি যাবতীয় বস্তুকে ঘিরে আছেন, যাবতীয় বস্তুর সঙ্গে আছেন; কিন্তু এই ঘিরে থাকা ও সঙ্গে থাকা সম্পর্কে আমাদের ধারনায় যা আসে সেরকম অবশ্যই নয়। তিনি ধারনার অতীত।
৫। আল্লাহ্‌পাকের জাত, সেফাত ও আফআলের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয় না।
৬। আল্লাহ্‌তায়ালা গনি অর্থাৎ শর্তবিহীন, অভাবশুন্য। তাঁর জাত সেফাত আফআল কোন বিষয়েই তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। অস্তিত্বে, গুণাবলীতে, কার্যাবলীতে সর্ব বিষয়েই তিনি অমুখাপেক্ষী।
৭। আল্লাহ্‌পাক যাবতীয় ক্ষতি এবং নতুনত্বের কালিমা থেকে মুক্তও। তিনি দেহবিশিষ্ট নন—স্থান কাল সম্ভূতও নন। সমস্ত প্রকার পূর্নতা একমাত্র তাঁহারই মধ্যে বর্তমান।
৮। আল্লাহ্‌তায়ালা আদিঅন্তশুন্য। তিনি ব্যতীত কেউই আদি অন্ত শূন্য নয়।
৯। আল্লাহ্‌তায়ালা সর্বশক্তিমান ও ইচ্ছাময়য়। তিনি ইচ্ছা এবং শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে সম্পূর্ন স্বাধীন। তিনি বাধ্যতা থেকে পবিত্র। যাবতীয় সৃষ্টি সর্বশক্তিমান ও ইচ্ছাময়ের সৃষ্টির প্রতি নির্ভরশীল। তিনিই সমস্ত সৃষ্টিকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। অতএব, সৃষ্ট বস্তুসমূহের অস্তিত্ব যেমন অস্তিত্ব প্রাপ্তি হিসেবে তাঁর মুখাপেক্ষী, তেমনি স্থায়িত্ব লাভের জন্যও তাঁরই মুখাপেক্ষী।
১০। সৃষ্ট বস্তুসমূহ যেমন আল্লাহ্‌পাকের সৃষ্টি, তেমনি তাঁদের মধ্যে দৃশ্যমান তাছিরও (প্রতিক্রিয়া সমূহ) তাঁরই সৃষ্টি। যেমন, আগুনের প্রজ্বলন শক্তি, ওষুধের রোগ নিরাময় ক্ষমতা ইত্যাদি। সাধারণভাবে বস্তুসমূহের তাছির স্বীকার করতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে এইরূপ ধারনা রাখতে হবে যে, আল্লাহ্‌তায়ালার ইচ্ছা না হলে কোন বস্তুর তাছির তো দূরের কথা, সেই বস্তুর অস্তিত্বও বিলুপ্ত হতে বাধ্য।
১১। সৃষ্টি বস্তুর তাছির থেকে উপকার গ্রহণ তাওয়াক্কোল (আল্লাহ্‌র প্রতি নির্ভরতা) বিরোধী নয়, বরং এরকম করাই প্রকৃত জ্ঞানীর স্বভাব। যেমন রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ সেবন, যুদ্ধবিজয়ের জন্য অস্ত্রসম্ভার বৃদ্ধির প্রচেষ্টা, পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য অর্থ উপার্জনের প্রচেষ্টা ইত্যাদি।

***************** চলবে পরবর্তী পর্বে ****************

No comments:

Post a Comment

COUNTER W