Wednesday, February 1, 2012

মিস কলঃ একটি ভালোবাসার কথা।-১৭

মিস কলঃ একটি ভালোবাসার কথা।-১৭


রুবির ইটালী যাবার খবর শোনার পর থেকে রাজুর মনটা ভালো নেই।
ঠিকমতো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না।
সারাক্ষণ শুধু রুবির কথা ভাবে।
তার এ রকম অবস্থা দেখে মালিকের ড্রাইভার আলী তাকে জিজ্ঞেস করে,’ কি হয়েছে রাজু? তোমার কি মন খারাপ?’
রাজু এখন হিন্দি এবং আরবী ভাষা মোটামুটিভাবে বুঝে। তাই তার কোন  সমস্যা হলো না আলীর কথা বুঝতে। সে খুব স্বাভাবিকভাবে বলে,’ না, কিছু হয় নি?’
‘কিন্তু তোমার চেহারা দেখে তো মনে হইতেছে কিছু একটা হয়েছে।’
আলীর একথা শোনে রাজুর খুব রাগ হলো।
তাই সে খুব চিৎকার করে বলে,’ আমার কিছু হয় নি। প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও।’
আলী আর কোন কথা বাড়ালো না।

রাজুকে এভাবে থাকতে দেখে সেলিমও বলে,’আাপনি মানুষটা কি বলেন তো? একটা মেয়ের জন্য কেন শুধু শুধু নিজেকে নষ্ট করছেন?’
রাজু কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে।
‘আগামী বৃহস্পতিবারে আপনাকে আবুধাবী এমিরাত প্লাজাতে নিয়ে যাবো। ঐখানে স্পেশাল জিনিস দেখলে ঐ ইটালীর মেয়ের কথা ভুলে যাবেন।’
‘ভাই প্লিজ, এখন আপনার কথা শুনতে আমার ভালো লাগতেছে না।’

রাজুর জীবনে আরেকবার একটা দুভার্গ্য আসলো। একদিন তার মালিক জানালো যে, তিনি নাকি তার ফ্যামিলি নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে কানাডা চলে যাবেন। তিনি রাজুকে দুই মাসের সময় দিয়েছেন, অন্য জায়গা চাকুরী খোজার জন্য।
রাজু পাগলের মতো বিভিন্ন জায়গায় কাজ খুজলো।
শেষ পর্যন্ত সে কোন চাকুরী জোগাড় করতে পারলো না। তাই তাকে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে হলো।

বাড়িতে এসে রাজু জানতে পারলো যে, তার ভাই নাকি মালয়েশিয়া চলে গেছে। রাজু বাড়িতে একদম চুপচাপ থাকে। বেশী একটা কথা বলে না কারো সাথে। শুধু কি যেনো ভাবে সারাক্ষণ। তার অবস্থা দেখে একদিন রাতে খাবার সময় তার মা তাকে প্রশ্ন করে,’ কি হইছে রে বাজান? তুই এমন চুপচাপ থাকিস কেন?’
রাজু বলে,’ কিছু হয় নি মা।’

বিদেশ থেকে আসার পর রাজু খেয়াল করলো যে, নুরপুর গ্রামের রাস্তাটা পাকা হয়ে গেছে।
এখন আগের মতো নৌকা ব্যবহার করা লাগবে না বর্ষাকালে। যেকোন সময় সিএনজিতে শহীদ নগর যাওয়া যাবে। এমন কি লালপুর যেতে নৌকা লাগবে না।
কেন না, যে বিশাল ব্রীজ তৈরী করা হয়েছে গোমতী নদীতে, তাতে যেকোন সময় হেটে হেটে লাল পুর বাজারে যাওয়া যাবে।
লালপুর ব্রীজটা হওয়াতে নুরপুর গ্রামের কিশোর ছেলেদের জন্য বিশেষ সুবিধা হয়েছে।
প্রতিদিন বিকেলবেলা নুরপুর গ্রামের ছেলেরা লালপুরে গিয়ে ক্রিকেট খেলে।
রাজুও প্রতিদিন হাটতে যায় লালপুরে।
নুরপুরের ছেলেরা প্রায় ওকে খেলতে বলে ওদের সাথে।
কিন্তু রাজু ওদের সাথে খেলতে রাজী হয় না।
সে ব্রীজের ওপর বসে থাকে আর রুবির কথা ভাবে।

গ্রামে আসার পর রাজু কথা বলার মতো একজনকেই খুজে পেয়েছে। সে হলো তারই পুরনো বন্ধু সাইদ। গ্রামের লোকেরা বলে, ওর কাছে নাকি যে কোন সমস্যার সমাধান আছে।
রাজুর বিষন্নতা দেখে সাইদের মন খারাপ হয়।
রাজুকে কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে কিছু বলে না।
একদিন সাইদ বলে,’কি রে তুই কি কোন বিদেশী ম্যামের প্রেমে পড়ছিস নাকি?’
রাজু বলে,’তোরে আবার কে বললো এ কথা?’
‘তাহলে, মুখটাকে এমন বিড়ালের মতো গোমড়া করে রাখিস কেন সব সময়?’
‘কি যা তা বলিস?’
‘তা না হলে, কিছু তো একটা হয়েছে, যার কারণে তুই এমন চুপচাপ থাকিস সব সময়।’
রাজু আর কিছু লুকোয় না সাইদের কাছে। সব ঘটনা খুলে বলে তাকে।
সব শোনে সাইদ বলে,’ দেখ দোস্ত। যে মেয়ের কোন খবরই নাই। তার জন্য ভেবে শুধু শুধু কেন কষ্ট দিচ্ছিস নিজেকে?’
‘সত্যি কথা কি জানিস? অনেক চেষ্টা করছি, ওকে ভুলে যেতে কিন্তু পারি নি। আমার মন বলে, জীবনে অন্তত একবার হলেও ওর দেখা পাবো।’
‘তুই আসলে এখনো বোকা রয়ে গেলি রে দোস্ত। এতদিনে হয়তো ও কোন স্বামীর ঘর করছে। আর সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।’
সাইদের কথাগুলো কাটার মতো বিধে রাজুর ভেতরে। কিন্তু সে তা প্রকাশ করে না।
(পর্ব-১৭ সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment

COUNTER W