মিস কলঃ একটি ভালোবাসার কথা।-১৯
রাজুদের ঘরে একটা পুরনো টেবিল রয়েছে। টেবিলটাকে রং করার জন্য সে তা উঠানে বের করলো। টেবিলে একটা ড্রয়ারও রয়েছে। ছোট্ট একটা তালা লাগানো তাতে। রাজু হাতুরী এনে তালাটা ভেঙ্গে ড্রয়ারটা খুললো। ড্রয়ারে তেমন কিছু ছিল না। শুধু একটা পুরনো সীম কার্ড ছিল। রাজু সীম কার্ডটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখলো। ভালো, নাকি খারাপ। তা সে বুঝতে পারলো না। ঘরে এসে সে সীম কার্ডটা তার নিজের মোবাইলে ঢুকালো। আর সাথে সাথে একটা এসএমএস আসলো মোবাইলে। রাজু এসএমএস টা ওপেন করে দেখলো যে, এটা মোবাইল কোম্পানী থেকে এসেছে। পুরনো সীম কার্ড ওপেন করায় বোনাস হিসেবে তিনশত টাকার টক টাইম জমা হয়েছে পুরনো সীম কার্ড এ। তিনশত টাকার টক টাইম পেয়ে রাজু মনে খুব খুশী হলো। তারপর সে এই পুরনো সীম কার্ড এর নাম্বার টা জানারা জন্য তার বাবার মোবাইলে কল দিলো। বাবার মোবাইলটা ঘরেই ছিল। বাবার মোবাইলটা চেক করে বুঝতে পারলো যে, এটা তার পুরনো সীম কার্ড। বিকেলবেলা। বাড়ির সামনের ফাকা মাঠে রাজু পাড়ার ছোট ছেট ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলছিল। রাজু ব্যাটিং করছে; এমন সময় পকেটের ভেতর থেকে তার সাইলেন্স করা মোবাইলটা ভাইব্রেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দিলো যে, একটা মিসকল এসেছে। অনেক দিন পর ক্রিকেট খেলে রাজু খুব মজা পাচ্ছে, তাই কে কল করেছে, তা জানার জন্য পকেট থেকে মোবাইল বের করে তা জানার প্রয়োজন মনে করলো না। এমন সময় রাজুর মা তাকে ডাকলো। মায়ের ডাক শোনে রাজু বাড়িতে চলে গেলো। মায়ের সামনে গিয়ে দাড়াতেই মা বলে,' আবার খেলতে গেছিস কেন? এক বার খেলে মজা হয় নি?' রাজু বুঝতে পারলো যে, তার মা পাচ বছর আগের ঘটনার কথা বলছে। তখন ওরা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মারামারি করেছিল। যার কারণে, সে দুই বছর পর্যন্ত বাড়িতে আসতে পারে নি। তাই আজ মায়ের কথা শোনে রাজু কিছু বললো না। এমন সময় মসজিদে মাগরিবের আজান শোনা গেলো। রাজু ওযু করে নামাজ পড়তে মসজিদে গেলো। নামাজ পড়ে এসে রাজু সাইদদের ঘরে আসলো। ঘরের বাইরে থেকে রাজু কয়েকবার সাইদের নাম ধরে ডাকলো। ঘর থেকে সাইদের মা জানালো যে, রাজু পশ্চিমপাড়া গেছে। রাজু আর কিছু না বলে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। সে যখন সাইদদের বাড়ির সামনের ব্রীজে আসলে, এমন সময় কে যেনো তাকে কল করলো তার মোবাইলে। তার মোবাইলটা সাইলেন্স করা, কিন্তু ভাইব্রেশন মুডে রাখা। তাই তার বুঝতে কষ্ট হলো না যে, তার মোবাইলে একটা কল এসেছে। কে কল করেছে, তা দেখার জন্য রাজু মোবাইলটা হাতে নিলো। সে দেখতে পেলো যে, তার মোবাইলে সতেরটা মিসকল এসেছে প্রাইভেট নাম্বার থেকে। কিন্তু সে বুঝতে পারলো না যে, কে তাকে প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল করতে পারে?' সে একবার ভাবলো, সম্ভবত সেলিম ভাই দুবাই থেকে ফোন করছে। কিন্তু আমি তো তাকে আমার এই সিমকার্ড এর নাম্বার দেই নি। তাহলে কে করতে পারে?' এমন সময় আবার কল আসলো তার মোবাইলে। এটাও প্রাইভেট নাম্বার থেকে। রাজু কলটা রিসিভ করে মোবাইলটা কানে ধরলো। তারপর সে 'হ্যালো' বললো। অপর প্রান্ত থেকে ছোট্ট একটা শব্দ শোনা গেলো,'হ্যালো।' কন্ঠটা শোনে রাজু যেনো একেবারে পাথরের মতো হয়ে গেলো। কারণ, কন্ঠটা তারই প্রিয়তমা রুবির। যার কন্ঠটা শোনার জন্য সে এতদিন পাগলের মতো হয়েছিল। রুবির কথা শোনে খুশীর আবেগে রাজু কেদে ফেললো। রুবিও যে কাদচ্ছে; রাজু তা স্পষ্ট বুঝতে পারলো। রুবি ভারী ভারী কন্ঠে বলে,'এতদিন কোথায় ছিলেন? আমি কতদিন আপনার এ নাম্বারে কল দিয়েছি, কিন্তু কখনো খোলা পাই নি।' রাজুও কাদতে কাদতে বলে, আমিও তো তোমার নাম্বারে অনেক ট্রাই করছি, কিন্তু কখনো খোলা পাই নি। একবার যা ও পেলাম, জানলাম তুমি নাকি ইটালী চলে গেছো। তোমার ইটালীর নাম্বারটা.........। বলতে গিয়ে রাজু বুঝতে পারলো রুবির কলটা কেটে গেছে। সে ভাবলো, হয়তো নেটওয়ার্ক প্রবলেম, তাই কেটে গেছে।

No comments:
Post a Comment