Wednesday, February 1, 2012

মিস কলঃ একটি ভালোবাসার কথা।-২০

মিস কলঃ একটি ভালোবাসার কথা।-২০

 

বেশ কয়েকদিন যাবৎ রুবি খুব ফুরফুরে মেজাজে কাজ করছে রেষ্টোরেন্টে।
তার এমন পরিবর্তন দেখে এলিনাও খুব অবাক হয়।
কিন্তু কিছুই জিজ্ঞেস করে না রুবিকে।
এমন কি রুবি নিজেও কিছু বলে নি।
সে শুধু রাজুর কথাই ভাবে। রাজুর সাথে তার আবার যোগাযোগ হবে, তা স্বপ্নেও সে ভাবে নি কখনো।
অনেকদিন পর সে এলিনাকে এই কথাটা বললো। তার কথা শোনে এলিনা তো মহাখুশী।
এলিনা বললো,’ সত্যি বলছো?’
‘হ্যা।’ রুবি বলে,’ তোমাকে ঠিক বুঝাতে পারবো না যে, আমি কতটুকু আনন্দিত!’
‘তোমার কথা শোনে আমার নিজেরও খুব আনন্দ লাগছে।’ এলিনা বলে,’ তা, কিভাকে রাজুর সাথে যোগাযোগটা করলে? একটু খোলে বলো তো। আমি নিশ্চিত বিষয়টা নিশ্চয় ইন্টারেস্টিং হবে।’
রুবি বলে,’বিষয়টা ইন্টারেস্টিং কি না জানি না। রাজু এখন দেশে। সে তার পুরনো সীম কার্ড ওপেন করেছে। আমি একদিন সেই নাম্বারে কল দিতে গিয়ে বুঝতে পারলাম। সে সীম কার্ডটা ওপেন করেছে।’
‘গ্রেট। আমি কিন্তু একটা বিষয় চিন্তা করে খুবই একসাইটেড হচ্ছি।’
‘কি সেটা?’
‘তোমাদের দুজনের ডেটিং।’
‘হঠাৎ আমাদের ডেটিং নিয়ে তোমার এত মাথাব্যথা কেন?’
‘একটু চিন্তা করো, চলতি পথে হঠাৎ তোমাদের দুজনের দেখা হলো, কিন্তু কেউ কাউকে চিনতে পারলে না। একবার ভাবো তো সিচুয়েশনটা কেমন হবে?’
রুবি সত্যি সত্যি এলিনার কথামতো চোখ বন্ধ করে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করলো।
এমন সময় তাদের ম্যানেজার এসে রুবিকে বলে,’কি রুবি সারাক্ষণ গল্প করলেই কি চলবে নাকি? কাজ করতে হবে না?’
‘যাচ্ছি স্যার।’ বলেই রুবি চলে গেলো।
লাঞ্চ টাইমে রুবি আর এলিনা একসাথে খাবার খেতে বসলো।
রুবি বললো, ‘এলিনা, তোমার কথাটা নিয়ে অনেকক্ষণ ভেবেছি।’
এলিনা খেতে খেতে বললো,’কোন কথাটা?’
‘ঐ যে তখন তুমি বলেছিলে।’
‘কি বলেছিলাম?’
‘চলতি পথে যদি আমাদের দুজনার দেখা হয়, আর তখন রাজু যদি আমাকে না চিনতে পারে….. বলেই রুবি চুপ হয়ে গেলো।
এলিনা বললো,’তারপর?’
‘আমার খুব কষ্ট লাগবে তখন।’ রুবি খুব আস্তে করে কথাটা বলে।
রুবির কথাটা শোনে এলিনা হেসে ফেলে।
তারপর সে বলে,’ আরে আরে! তুমি তো দেখছি খুব সিরিয়াস হয়ে গেলে আমার কথাটা শোনে। আমি তো জাষ্ট ফান করেছি মাত্র।’
রুবি বলে,’ তুমি আর যা-ই বলো, বিষয়টা কিন্তু খুব ভাবাচ্ছে আমাকে।’
‘আহা! বাদ দাও তো এসব আজেবাজে চিন্তা। প্রার্থনা করি, রাজু তোমাকে দেখেই যেনো বুকে টেনে নেয়।’
রুবি আর কিছু বললো না।
রুবি মাত্র কাজ সেরে বাসায় এসে নিজের রুমে গেলো।
একটু পরে তার বাবা আসলো তার রুমে।
তার বাবা কোন ভুমিকা ছাড়াই বলতে শুরু করলো,’তুই কি শেষ পর্যন্ত আমার নামটা ডুবাবি নাকি? আমাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না নাকি?’
রুবি তার বাবার কথার মমার্থ কিছুই বুঝতে পারলো না।
তাই সে বললো,’আমি আবার কি করলাম?’
তার বাবা বললো,’ তুই অবশ্যই বুঝতে পারছিস আমি কোন বিষয়ে কথা বলছি।’
‘সত্যি বলছি, আমি কিছুই বুঝতে পারি নি।’
তার এ কথা শোনে তার বাবা রেগে গেলো।
তিনি খুব উচ্চ স্বরে বললেন,’তুই নাকি ঐ বেয়াদব ছেলেটার সাথে যোগাযোগ করা শুরু করেছিস? তোর লজ্জা শরম নেই? তুই কি সব ভুলে গেছিস?’
রুবি এবার বুঝতে পারলো যে, তার বাবা রাজু সম্পর্কে বলছে। তাই সে চুপচাপ মাথা নীচু করে বাবার কথা শুনছে।
তার বাবা আরো বললো,’ তোর এতো সাহস হলো কি করে? তুই কি সব ভুলে গেছিস? ঐ ছেলের কারণে তোর বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে।’ বলেই তিনি রুবির রুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগলেন। যেতে যেতে তিনি বললেন,’ একবার ঐ ছেলেকে হাতের কাছে পেয়ে নেই। তারপর মজা দেখাবো!’
রুবির বাবা বের হয়ে যেতেই রুবি তার রুমের দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে রাজুর কথা ভাবলো।
তারপর ফোনটা বের করে কল দিলো রাজুকে।
রুবি ভাবলো রাজু যেনো তার কলের অপেক্ষায় ছিল। রিং হবার আগেই সে তার কল রিসিভ করলো।
রুবি অবাক হয়ে বললো,’কি ব্যাপার? রিং না হতেই আাপনি আমার কল রিসিভ করলেন কিভাবে?’
রাজু বললো,’ রিং হয়েছে তো?’
‘তাহলে, আমি শুনতে পাই নি কেন?’
রাজু বিষয়টা ব্যাখ্যা করে। সে বলে,’ আমি আসলে মোবাইলে গেম খেলছিলাম; এমন সময় কল আসতে দেখে, সাথে সাথে খেলা বাদ দিয়ে কলটা রিসিভ করলাম।’
‘ও আচ্ছা।’ রুবি বলে,’ এবার আপনার খবর বলুন?’
রাজু একটু হতাশ কন্ঠে বলে,’ আমার মতো অভাগার আবার কি খবর?’
‘কেন? কোন খবর নেই নাকি?’
‘না, তেমন কোন খবর নেই।’
‘কেন? আপনার ওয়াইফ এর খবর? বাচ্চাদের খবর কি বলা যায় না।’
রুবির কথা শোনে রাজু বললো,’ তোমার কথা শোনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসতে পারছি না।’
‘কেন?’ রুবি জানতে চাইলো,’কোন সমস্যা আছে নাকি?’
‘কেন আবার?’
‘হ্যা কেন? বলুন?’
‘শোন! একজনের কথা ভাবতে ভাবতে কিভাবে যে, আমার তিনটা বছর কেটেছে……। বলেই রাজু থামলো।
তার কথা শোনে রুবি মনে মনে খুব খুশি হলো। তার কাছে মনে হলো রাজু হয়তো তার কথাই ভেবেছে। তারপরও বিষয়টা নিশ্চিত হবার জন্য রুবি একটু দুষ্টামীর আশ্রয় নিয়ে বলে,’সেই লাকি পারসনটা কে? বলা যাবে আমাকে?’
রাজু বললো,’ কেন? তুমি কি জানো? কে হতে পারে?’
‘আমি কি করে বলবো? আমি কি আপনার মনের কথা পড়েছি নাকি?’
‘শোন, মনের সাথে যদি মনের টান থাকে. তাহলে এমনিতেই মনের কথা বুঝা যায়।
‘বাহ! দারুন কথা তো। সেই লাকি পারসনটাকে কি এরকম কথা বলেই কি পাগল করছেন নাকি?’ বলেই রুবি একটু হাসলো।
তার হাসি শোনে রাজু বললো,’হাসলে কেন?’
‘না, এমনি।’
রাজু এখনো রুবির দুষ্টামী ধরতে পারে নি দেখে রুবি মোবাইলটা কানের কাছ থেকে সরিয়ে একটু হাসলো। তারপর মোবাইলটা আবার কানের কাছে ধরে, সে বললো,’ হ্যা, কি যেনো বলছিলেন?’
রাজু বললো,’ আমার লাকি পারসনকে নিয়ে কথা বলছিলাম।’
‘এবার বলুন, কিভাবে তাকে পাগল করলেন?’
‘পাগল আর করলাম কোথায়?’
‘কেন?’
‘তার আগেই তো বিদেশ চলে গেলাম।’
‘তাই বলে একবারে না বলে?’ রুবি বলে।
‘আসলে, ঐ মুহুর্তে আমি তার সাথে কথা বলার সুযোগ পাই নি।’
‘বিদেশ গিয়েও কিন্তু ফোন করতে পারতেন, তাই না?’
‘হ্যা পারতাম।’
‘কিন্তু করেন নি কেন?’
‘ওখানেও একটা সমস্যা ছিল।’
‘কি সমস্যা? বলা যাবে কি? নাকি বিদেশী ম্যাম দেখেই সেই বেচারীর কথা ভুলে গিয়েছিলেন।’
তার এ কথাটা শোনে রাজু একদম চুপ হয়ে গেলো।
রুবি ভাবলো রাজু হয়তো কল কেটে দিয়েছে। তারপরও নিশ্চিত হবার জন্য সে দ্রুত মোবাইলটা চেক করলো। সে বুঝতে পারলো যে, রাজু এখন কল কাটে নি।
তারপর সে মোবাইলটা কানে দিয়ে দিয়ে কাদতে কাদতে বলে,’হ্যালো, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ। আমি আসলে এতোক্ষণ দুষ্টামী করছিলাম আপনার সাথে ।’
রাজুও কাদতে কাদতে বললো,’এমন দুষ্টামী আর কখনো করো না প্লিজ। তুমি জানো বিদেশ গিয়েও আমি এক সেকেন্ডের জন্যও তোমাকে ভুলতে পারি নি। সারাক্ষণ শুধু তোমার কথা মনে পড়েছে।’
‘তাহলে ফোন করো নি কেন আমাকে?’ নিজের অজান্তে রুবি এই প্রথম রাজুকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করলো।
বিষয়টা খেয়াল করে রাজু বললো,’ কি বললে তুমি একটু আগে?’
রুবি নিজেও ব্যাপারটা বুঝতে পারে নি। সে ভাবলো, তার শোনে রাজু হয়তো রাগ করেছে। তাই সে একটু ভয়ে ভয়ে বলে,’আমি আবার কি বললাম? আমি শুধু জানতে চেয়েছি, আপনি আমাকে ফোন করেন নি কেন, তা জানতে চেয়েছি?’
‘না, তুমি এটা বলো নি?’
‘তাহলে কি বলছি?’
‘তুমি নিজে ভেবে দেখো।’
রুবি ভেবে দেখলো যে, তার অজান্তেই তার মুখ থেকে ‘তুমি’ শব্দটা উচ্চারিত হয়েছে।
তাকে চুপ থাকতে দেখে অপর প্রান্ত থেকে রাজু বললো,’হ্যালো, কেটে দিলে নাকি?’
রুবি বললো,’না।’
‘তাহলে চুপ হয়ে গেলে যে।’
‘তুমি না বললে চুপ করে থাকতাম।’
‘থ্যাংকস।’
‘কি জন্য?’
‘আমাকে তুমি বলার জন্য।’
‘এবার বলো, তুমি ফোন করো নি কেন?’
‘আসলে, জানি না, তুমি বিশ্বাস করবে কি না আমার কথা। তারপরও বলি, বিদেশ গিয়ে আমি অদ্ভুত এক সমস্যায় পড়েছিলাম।’
‘কি সেটা?’
‘ভাষা।’
‘মানে!’
‘অর্থাৎ, ওখানে গিয়ে প্রথম একমাস বাংলায় কথা বলার মতো কোন মানুষ খুজে পাই নি।’
‘কেন?’
‘ওখানে আমি যেখানে কাজ করতাম, মালিক ছিল এরাবিয়ান; আরবী ছাড়া কিছুই বুঝে না। আর তার ড্রাইভার ছিল ইন্ডিয়ান। সেও হিন্দি ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। একদিন কি হয়েছে? জানো?’
‘কি?’
‘আমি ড্রাইভার লোকাটাকে ইংরেজিতে বললাম যে, আমি বাড়িতে ফোন করবো। কিন্তু লোকটা উল্টা বুঝলো। সে ভাবলো, আমি হয়তো বাড়িতে ফোন করেছি। তারপর জানতে চাইলো আমি বিবাহিত কিনা?’
‘তুমি কি জবাব দিলে?’
‘হ্যা বলছি।’
রাজু কথা শোনে রুবি খুব কষ্ট পেলো।
সে রাজুকে বললো,’তাহলে তুমি মিথ্যে বললে কেন আমার সাথে?’
রাজু বুঝতে পারলো রুবি রেগে গেছে তার কথা শোনে। তাই সে তাকে সান্তনা দেবার উদ্দেশ্যে বলে,’ আরে রাগ করছো কেন? আমি কি বলছি সেটার ব্যাখ্যাটা তো শুনবে আগে।’
রুবি বললো,’ থাক, আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না তোমার। তুমি তোমার ওয়াইফ নিয়ে থাকো।’
‘প্লিজ, আমার কথাটা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন।’
‘ওকে। আমি এখন রাখবো। বাই।’
‘আমার ওয়াইফটা কে? জানো? আমার হচ্ছো তুমি। আমি সব সময় তোমাকেই আমার ওয়াইফ হিসেবে ভেবেছি।
রাজুর কথাটা শোনে রুবির মাথাটা ঠান্ডা হলো।
রুবি বললো,’ তাহলে তুমি ঐ লোকটাকে হ্যা বললে কেন?’
‘কারণ, তখন আমি হিন্দী বুঝতাম না, যখন হিন্দী ভাষা শিখলাম, তখন ঐ লোকটার কথাগুলো মনে করে একা একা খুব হেসেছি।’
‘আমাকে ক্ষমা করে দাও। না যেনো তোমাকে আঘাত দিয়েছি।’
‘ওকে।’ রাজু বললো।
(পর্ব-২০ সমাপ্ত)

 

No comments:

Post a Comment

COUNTER W