Monday, February 27, 2012

সম্মানপ্রাপ্তির দিনে হতাশা আর বিতর্কে টেন্ডুলকার




তাহলে কি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) শেষবারের মতো খেলা হয়ে গেল শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের? গত বছর বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর হতে চলেছে এক বছর। এই সময়ে বেশ কয়েকবার সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ছুঁতে পারেননি তিন অঙ্কের 'ম্যাজিক ফিগার'। ভারতীয় দলে শোনা যাচ্ছে অন্তঃকোন্দলের চাপা গুঞ্জন, যদিও শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতোই বলা হচ্ছে- 'রোটেশন পলিসি' আর ২০১৫ বিশ্বকাপের দলের কথা। শুধু তা-ই নয়, অনেক সাবেক সতীর্থ ও সমসাময়িক ক্রিকেটারও বলতে শুরু করেছেন, বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে থেকে অবসর নিলেই বোধহয় ভালো করতেন টেন্ডুলকার। তাই বুঝি আর দেরি করেননি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রডনি ক্যাভেলিয়র! সময় থাকতে থাকতেই টেন্ডুলকারের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন এসসিজির আজীবন সদস্যপদের সনদ। একই সঙ্গে এ যুগের ব্র্যাডম্যানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের আবক্ষ ভাস্কর্য। চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে সিডনিতে আর খেলা নেই, ২০১৫ বিশ্বকাপের সহ-স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া হলেও বছর তিনেক পর যে টেন্ডুলকার খেলোয়াড় হিসেবে আবার আসবেন সেই সম্ভাবনাটাও ক্ষীণ। এই বেলা দেরি করলে যে আর চলে না!
প্রথম বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে টেন্ডুলকারের হাতে এসসিজির আজীবন সদস্যপদের সনদ, একটি বই আর একটি বাঁধাই করা ফ্রেম তুলে দিয়েছেন নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের সরকারপ্রধান ব্যারি ও' ফেরেল। এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হতে পেরে ব্যারি নিজেও খানিকটা রোমাঞ্চিত, 'শচীন হচ্ছেন বিশ্বের মহত্তম ক্রিকেটারদের একজন এবং তাঁকে আমরা সম্মানিত করছি বিশ্বের মহত্তম একটি মাঠের আজীবন সদস্যপদের মাধ্যমে। কিংবদন্তিতুল্য এই ক্রিকেটার নিজেই জানিয়েছেন, বিদেশে এসসিজিই হচ্ছে তাঁর প্রিয় মাঠ, এবং সেটা কেন তা এই মাঠে তাঁর রেকর্ড দেখলেই বোঝা যায়।' ট্রাস্ট চেয়ারম্যান রডনি ক্যাভেলিয়রও প্রকাশ করেছেন তাঁর অনুভূতি, 'এই ট্রাস্ট কিন্তু সহজে কাউকে আজীবন সদস্য করে না। শচীন হচ্ছেন প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার, যাঁকে এই মাঠের আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। নিজের ক্যারিয়ারে শচীন সব সময়ই বিনয় ও শ্রদ্ধার পথে হেঁটেছে, আমি নিশ্চিত পরবর্তীতে এই মাঠের সদস্য ও ক্রিকেট সমর্থকরাও তাঁকে যেকোনো সময়ই এখানে সাদর অভ্যর্থনা জানাবেন।'
টেন্ডুলকারের সকাল বেলাটা যদি হয় প্রাপ্তির আনন্দে রঙিন, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই রং ঢেকে গেছে হতাশার কালিমায়। সবাই চাতকের মতো প্রতীক্ষায় ছিলেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটা স্মরণীয় করে রাখতে নিজের অন্যতম প্রিয় মাঠেই হয়তো সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিটা করে ফেলবেন 'মাস্টার ব্লাস্টার'। ২ বাউন্ডারি সেই আভাসটাই দিচ্ছিল। কিন্তু বিচ্ছিরি রান আউট শেষ করে দিয়েছে সেই সম্ভাবনা। 'ফলো থ্রু'-তে নন স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে সিঙ্গেলের জন্য দৌড়াতে থাকা টেন্ডুলকারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেল ব্রেট লির, তাতেই খানিকটা বাড়তি সময় পেয়ে স্টাম্প ঠুকে দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে কি হতো, সেঞ্চুরি হতো কি হতো না, এসব আগে থেকেই অনুমান করা মুশকিল। কিন্তু সত্যি কথাটা হচ্ছে, বিদেশে নিজের প্রিয় মাঠে এবারই হয়তো শেষবার খেলতে দেখা গেল টেন্ডুলকারকে, যাঁর ইনিংসের সমাপ্তিটা এভাবে না হলেই বোধহয় ভালো হতো।
ব্যর্থতা ডেকে আনে দুঃসময়। তাই হয়তো সিনিয়র ক্রিকেটারদের কার্যকারিতা, তাঁদের ফিল্ডিং দক্ষতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এমনি টেন্ডুলকারের ফর্ম এবং দলে থাকা-না থাকা নিয়েও প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছেন সতীর্থ গৌতম গম্ভীর। এতে কিন্তু উলটো বিপদের গন্ধই পাচ্ছেন মাইক হাসি। তাঁকেও একসময় ফেলে দেওয়া হয়েছিল বাতিলের খাতায়, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম দিয়ে এখন দলে জায়গাটা টিকিয়ে রেখেছেন 'মিস্টার ক্রিকেট'। টেন্ডুলকারকে খেলা চালিয়ে যেতে দেখেই অনুপ্রাণিত হওয়া হাসি তো বলেই দিয়েছেন, 'আমি টেন্ডুলকারের সমালোচনা শুনতে চাই না, কারণ এটা তাকে আরো বিপজ্জনক করে তোলে।' ওয়েবসাইট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, সিডনি মর্নিং হেরাল্ড

No comments:

Post a Comment

COUNTER W